অনলাইন ডেস্ক
রংপুরের পীরগাছায় ধানক্ষেতের ভেতর অর্ধগলিত অবস্থায় পড়ে থাকা মাসুদ রানা (১৯) নামে এক তরুণের হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। গত ১৪ সেপ্টেম্বর তার মরদেহটি উদ্ধার করে পুলিশ। মরদেহের পাশে পড়ে ছিল একটি স্যান্ডেল। সেই স্যান্ডেলই সূত্র ধরে তদন্তে নামে পুলিশ।
পরবর্তীতে হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের মধ্যে একজন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন।
গ্রেপ্তাররা হলেন- পশ্চিম ব্রাহ্মণীকুন্ডা (কানিপাড়া) এলাকার আব্দুল মালেক মিয়ার ছেলে রিয়াদ হাসান রকি (১৯), বুদা মিয়ার ছেলে গাউসুল আজম হিরন (২৩), আব্দুল মালেক মিয়ার স্ত্রী রঞ্জিনা বেগম রিনা (৪২) ও লিটন মিয়ার মেয়ে লুফা আক্তার (১৭)।
গতকাল শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) পীরগাছা থানায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে রংপুরের সহকারী পুলিশ সুপার (সি-সার্কেল) আসিফা আফরোজ আদরী এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, ‘মাসুদ রানা গত ১৪ সেপ্টেম্বর সকালে ঢাকা থেকে রংপুরে আসেন একটি মামলার হাজিরা দিতে।
আদালতের কাজ শেষে তিনি দাদার বাড়ি পশ্চিম ব্রাহ্মণীকুন্ডা গ্রামে অবস্থান করেন। ১৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ৭টার দিকে তিনি বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফিরে আসেননি। পরিবারের সদস্যরা খোঁজাখুঁজির পরও তার কোনো সন্ধান পাননি। ২১ সেপ্টেম্বর দুপুরে স্থানীয় ফারুক মাস্টারের ধানক্ষেত থেকে উদ্ধার হয় তার অর্ধগলিত মরদেহ।
এ ঘটনায় তার দাদা আব্দুল করিম ২২ সেপ্টেম্বর পীরগাছা থানায় অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘মরদেহ উদ্ধারের পর ঘটনাস্থলে পড়ে থাকা একটি স্যান্ডেল থেকেই মামলার মোড় ঘুরে যায়। তদন্তে পুলিশ জানতে পারে স্যান্ডেলটি মাসুদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু রিয়াদ হাসান রকির। এরপর প্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যের সহায়তায় ২২ সেপ্টেম্বর রিয়াদ হাসান রকি (১৯) ও গাউসুল আজম হিরনকে (২৩) গ্রেপ্তার করা হয়। আদালতের তিন দিনের রিমান্ডে তারা হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন।
তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ২৪ সেপ্টেম্বর রাতে রঞ্জিনা বেগম রিনা (৪২) ও লুফা আক্তারকে (১৭) নামে দুই নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়। গত ২৫ সেপ্টেম্বর দুই দিনের রিমান্ড শেষে তারাও হত্যায় সম্পৃক্ত থাকার কথা স্বীকার করেন। তাদের মধ্যে গাউসুল আজম হিরন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।’
আসামিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে পুলিশ জানায়, ইয়াবা বিক্রির টাকা ভাগাভাগি নিয়ে মাসুদ রানা ও রিয়াদ হাসান রকির মধ্যে তীব্র বিরোধ সৃষ্টি হয়। সেই দ্বন্দ্ব থেকেই পরিকল্পিতভাবে মাসুদকে ডেকে নিয়ে যান তারা। পরে ইট দিয়ে মাথায় আঘাত করে হত্যা করেন এবং মরদেহ ধানক্ষেতে ফেলে রেখে পালিয়ে যান।
সহকারী পুলিশ সুপার আসিফা আফরোজ আদরী বলেন, ‘একটি স্যান্ডেল থেকে শুরু করে প্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তৎপরতার মাধ্যমে আমরা এই জটিল হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করতে পেরেছি। দ্রুততম সময়ে আসামিদের গ্রেপ্তার ও তদন্তের অগ্রগতি পুলিশের প্রতি মানুষের আস্থা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। মামলার তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।’
সংবাদ সম্মেলনে পীরগাছা থানার ওসি রোমেল বড়ুয়া ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই শফিকুল ইসলাম আকন্দ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
















Leave a Reply