অ্যানথ্রাক্স কী, কিভাবে ছড়ায় এই রোগ?

অনলাইন ডেস্ক

দেশে অ্যানথ্রাক্স রোগে আক্রান্তের ঘটনা নতুন নয়। এর আগেও বিভিন্ন সময় অ্যানথ্রাক্স ছড়িয়েছে। প্রায়ই এই রোগে আক্রান্তের খবর শোনা যায়। গবাদি পশুর পাশাপাশি মানুষও আক্রান্ত হচ্ছে এই রোগে।

প্রতিবারই মানুষকে সতর্ক করা হয়।
এবারও বিশেষজ্ঞরা মানুষদের আতঙ্কিত না হয়ে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দিয়েছেন। অসুস্থ গবাদি পশু জবাই, মাংস সংগ্রহ ও বিক্রি না করতে বলেছেন তারা। অ্যানথ্রাক্স কী, কিভাবে ছড়ায় এবং কিভাবে প্রতিরোধ করা যায়, সেসব বিষয়ে সচেতনতায় আজকের প্রতিবেদন।

চলুন, জেনে নেওয়া যাক।
অ্যানথ্রাক্স কী, কিভাবে ছড়ায়
বিশেষজ্ঞদের মতে, অ্যানথ্রাক্স প্রাণিবাহিত একটি গুরুতর সংক্রামক রোগ। ব্যাসিলাস অ্যানথ্রাসিস নামক ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে এই রোগ হয়। যেসব প্রাণী জাবর কাটে, যেমন গরু, ছাগল, ভেড়া—এরা এই রোগে বেশি আক্রান্ত হয়।

অ্যানথ্রাক্সের জীবাণু ছোট গুটি আকারের, যেটিকে স্পোর বলে। এই স্পোর মাটিতে অনুকূল পরিবেশে দীর্ঘ সময় ধরে টিকে থাকতে সক্ষম।
ঘাস-পাতায় অ্যানথ্রাক্সের স্পোর থাকে এবং ঘাস খাওয়ার সময় গবাদি পশুর মুখের কোনায় কেটে গেলে সেখান দিয়ে অ্যানথ্রাক্সের জীবাণু অনুপ্রবেশ করতে পারে। আর এভাবে গবাদিপশু অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত হয় এবং পরবর্তীতে নানা লক্ষণ প্রকাশ পায়।
অ্যানথ্রাক্স সাধারণত প্রাণী থেকে প্রাণীতে বা মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায় না।

তবে অ্যানথ্রাক্স স্পোর প্রাণীর শরীরে প্রবেশ করলে তখন তা সক্রিয় হয়ে বংশবৃদ্ধি করে এবং টক্সিন উৎপাদন করে। এ ছাড়া আক্রান্ত পশু জবাইয়ের পর মাংস, রক্ত ও পশম বা হাড়ের সংস্পর্শ থেকে মানুষের মধ্যে এ রোগ ছড়াতে পারে। সংক্রমিত পশুর হাড় দিয়ে তৈরি পশুখাদ্য থেকেও অ্যানথ্রাক্স ছড়াতে পারে।
অ্যানথ্রাক্সের ধরন ও লক্ষণ

অ্যানথ্রাক্সের বিভিন্ন ধরন থাকতে পারে। যেমন—

ত্বকের অ্যানথ্রাক্স
অ্যানথ্রাক্সের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় কিউট্যানিয়াস বা ত্বকের অ্যানথ্রাক্স। অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত পশুর সংস্পর্শে গেলে এবং ত্বক কেটে গেলে বা ক্ষতের মাধ্যমে অ্যানথ্রাক্স স্পোর মানুষের শরীরে প্রবেশ করলে মানুষের ত্বক অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত হতে পারে।

এই ধরনের অ্যানথ্রাক্স হলে জ্বর হয়, ত্বকে ফোস্কা, ফুসকুড়ির মতো দেখা দেয়, ফুলে যায়, কিছুদিন পর ত্বকের ক্ষত বা ঘা কালো আকার ধারণ করে, ব্যথার অনুভূতি হয়।
পরিপাকতন্ত্রের অ্যানথ্রাক্স

পেটের ভেতরে অ্যানথ্রাক্সে জীবাণু প্রবেশ করলে বিরল এই গ্যাস্ট্রোইনটেস্টিনাল বা পরিপাকতন্ত্রের অ্যানথ্রাক্স হয়। আক্রান্ত পশুর মাংস খেলে, কাঁচা মাংস, আধা সিদ্ধ মাংস খেলে পেটের ভেতরে পরিপাকতন্ত্রের অ্যানথ্রাক্স হতে পারে। এর ফলে পেট ব্যথা, বমি, বমি বমি ভাব, জ্বর, ডায়রিয়া, রক্তবমিও হতে পারে।

শ্বাসজনিত অ্যানথ্রাক্স

ট্যানারিতে কাজ করার সময়, অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত প্রাণীর চামড়া প্রক্রিয়াজাত করার সময় অ্যানথ্রাক্সের স্পোর শ্বাস-প্রশ্বাসের মধ্য দিয়ে শ্বাসতন্ত্রে প্রবেশ করলে পালমোনারি বা শ্বাসজনিত অ্যানথ্রাক্স হতে পারে। এর ফলে শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথাসহ গুরুতর জটিলতা দেখা দিতে পারে। এই ধরনটি খুবই বিরল, কিন্তু ভয়াবহ।

তাই কোথাও অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত হলে সতর্ক থাকতে হবে। এ ছাড়া অ্যানথ্রাক্সের জীবাণু পরীক্ষা করে দেখতে হবে এটির উৎস কোথায় এবং এর বৈশিষ্ট্য ও চরিত্র পরিবর্তন হয়েছে কি না।
অ্যানথ্রাক্সের চিকিৎসা

আইইডিসিআর অ্যানথ্রাক্স চিকিৎসার জন্য গাইডলাইন তৈরি করেছে। সেই অনুযায়ী আক্রান্ত ব্যক্তিকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। রোগীর পরিস্থিতি অনুযায়ী পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে অ্যান্টিবায়োটিক ও ব্যথানাশক ওষুধ দেওয়া হয়। আক্রান্ত স্থানে লাগানোর জন্য মলম, ওষুধ দেওয়া যেতে পারে।

অ্যানথ্রাক্সের ধরণ বুঝে রোগীকে গাইডলাইন অনুযায়ী চিকিৎসা দিতে হবে। সময়মতো চিকিৎসা না করলে রোগের জটিলতা বাড়বে।

প্রতিরোধে করণীয়

রংপুরসহ দেশের বেশকিছু জায়গায় অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত হয়েছে। যদিও এতে উদ্বেগের কিছু নেই। তবে এটি প্রতিরোধে সবাইকে সচেতন হতে হবে।

অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত গবাদিপশু এবং এ রোগে মৃত পশুর সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে।
অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত পশু জবাই করতে দেওয়া যাবে না।
অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত পশুর মাংস বিক্রি এবং খাওয়া যাবে না।
আক্রান্ত ও অসুস্থ পশুকে চিকিৎসার জন্য প্রাণীসম্পদ চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে।
পশুশ্রমিক ও কসাইদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে হবে।
পশুদের নিয়মিত অ্যানথ্রাক্সের টিকা দিতে হবে।
যেসব এলাকায় অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত হবে তার ১০ কিলোমিটারের মধ্যে সব চার-পেয়ে প্রাণীকে অ্যানথ্রাক্সের টিকা দিতে হবে।
অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত পশু মারা গেলে পুড়িয়ে ফেলা উত্তম। সেটি সম্ভব না হলে মাটিতে গভীর গর্ত করে পুঁতে ফেলতে হবে।
অসুস্থ গরু বিক্রি ও জবাই করে মাংস কাটার ওপর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নজরদারি বাড়াতে হবে। নিয়মিত মাংসের দোকান পরিদর্শন করতে হবে এবং গুণগত মান যাচাই করতে হবে।
দেশে অ্যানথ্রাক্স প্রতিরোধে গবাদি পশুদের চিকিৎসা দেওয়ার ব্যবস্থা থাকলেও মানুষের ক্ষেত্রে এ ধরনের টিকার ব্যবহার নেই। সেজন্য অসুস্থ গরু জবাই বা এর মাংস বিক্রি করা যাবে না, সে বিষয়ে লোকজনকে সচেতন হতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *