অনলাইন ডেস্ক
হেমন্তের প্রথম সকালে আকাশে ঝকঝকে রোদের দেখা। এমন ঝলমলে পরিবেশে সকাল থেকেই খুলনার সেন্ট জোসেফস উচ্চবিদ্যালয় প্রাঙ্গণ মুখর হয়ে ওঠে শিক্ষার্থীদের পদচারণে। রঙিন ব্যানার, হাতে প্রজেক্টের বোর্ড আর উৎসুক মুখ—সব মিলিয়ে উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়ে মাঠজুড়ে। এমন আনন্দঘন পরিবেশে আজ শুক্রবার শুরু হয় বিকাশ-বিজ্ঞানচিন্তা বিজ্ঞান উৎসবের খুলনা আঞ্চলিক পর্ব।
সকাল নয়টার দিকে বেলুন উড়িয়ে, জাতীয় সংগীত ও জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে ‘বিজ্ঞানমনস্ক হওয়ার প্রত্যয়ে’ আয়োজিত এই উৎসবের উদ্বোধন করা হয়। খুলনা বিভাগের ১০ জেলার বিভিন্ন স্কুলের মাধ্যমিক ও নিম্নমাধ্যমিক পর্যায়ের প্রায় ৫৫০ জন শিক্ষার্থী অংশ নেয়। উৎসবে তারা নিজ নিজ বৈজ্ঞানিক প্রজেক্ট প্রদর্শন করছে। আয়োজনে আরও আছে বিজ্ঞানভিত্তিক কুইজ প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক পরিবেশনা, বিজ্ঞানভিত্তিক বক্তৃতা ও ম্যাজিক শো। অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের স্ন্যাকস পার্টনার হিসেবে আছে ড্যান ফুডস লিমিটেড। সহযোগিতায় আছে খুলনা বন্ধুসভা।
উদ্বোধনী পর্বে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের সঙ্গে জাতীয় পতাকা ও উৎসবের পতাকা উত্তোলন করা হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন খুলনার সেন্ট জোসেফস উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও ভেন্যুপ্রধান আলফ্রেড রনজিৎ মণ্ডল, বিকাশের ইভিপি এবং রেগুলেটরি অ্যান্ড অ্যাফেয়ার্স ডিপার্টমেন্টের প্রধান হুমায়ূন কবির, খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নাজমুল আহসান, বিজ্ঞানচিন্তার নির্বাহী সম্পাদক আবুল বাসার, প্রতিনিধি উত্তম মণ্ডল প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন খুলনা বন্ধুসভার সহসভাপতি এম এম মাসুম বিল্যাহ।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় স্কুলের শিক্ষার্থী অর্জুন রায় প্রথমবারের মতো বিজ্ঞান উৎসবে যোগ দিয়েছে। বিজ্ঞান কুইজে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি আরও দুই বন্ধু সানবীর রহমান ও সুর কুন্ডকে নিয়ে প্রজেক্ট তৈরি করে এনেছে। অর্জুন জানায়, ‘আমি বিজ্ঞানমনস্ক মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠার প্রত্যয় নিয়ে এই উৎসবে যোগ দিয়েছি।’
আজ শুক্রবার সকাল নয়টার দিকে বেলুন উড়িয়ে, জাতীয় সংগীত এবং জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে ‘বিজ্ঞানমনস্ক হওয়ার প্রত্যয়ে’ আয়োজিত এই উৎসবের উদ্বোধন করা হয়
আজ শুক্রবার সকাল নয়টার দিকে বেলুন উড়িয়ে, জাতীয় সংগীত এবং জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে ‘বিজ্ঞানমনস্ক হওয়ার প্রত্যয়ে
সকাল সাড়ে নয়টা থেকে শুরু হয় আঞ্চলিক কুইজ প্রতিযোগিতা। ৬০টির বেশি প্রজেক্ট প্রদর্শনী জন্য শিক্ষার্থীরা নিবন্ধন করে। বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত এই প্রদর্শনী চলে। এরই মধ্যে সকাল ১০টায় বিদ্যালয়ের মিলনায়তনে শুরু হয় আলোচনা পর্ব। বেলা ১১টায় অনুষ্ঠিত হয় প্রশ্নোত্তর পর্ব, বিজ্ঞান ম্যাজিক শো ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। দুপুরে পুরস্কার বিতরণের মধ্য দিয়ে শেষ হয় এই উৎসব। ম্যাজিক শো দেখান জাদুশিল্পী ব্রাইটস্টার এম সায়মন।
প্রশ্নোত্তর পর্বে শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানবিষয়ক প্রশ্নের উত্তর দেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক ড. কাজী মাসুদুল আলম, পদার্থবিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের সহযোগী অধ্যাপক ড. রিংকু মজুমদার, রসায়ন ডিসিপ্লিনের শিক্ষক আসিফুর রহমান, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আলমগীর হোসেন এবং খুলনা সরকারি ব্রজলাল কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. তৌহিদুল ইসলাম।
ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা একটি ক্যাটাগরিতে অংশ নিচ্ছে প্রজেক্ট প্রদর্শনীতে। কুইজ প্রতিযোগিতায় দুটি ক্যাটাগরি—নিম্নমাধ্যমিক (ষষ্ঠ-অষ্টম) ও মাধ্যমিক (নবম-দশম ও চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষার্থী)। নিবন্ধন করা শিক্ষার্থীরাই কুইজে অংশ নিতে পারছে। উৎসবে শিক্ষার্থীদের প্রজেক্ট মূল্যায়ন করছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। পুরস্কার বিতরণী পর্বে আরও উপস্থিত ছিলেন লেখক ও অনুবাদক ইসমাইল আরমান, বিজ্ঞানচিন্তার সহসম্পাদক উচ্ছ্বাস তৌসিফ ও কাজী আকাশ, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক তুহিন রায়।
প্রতিটি ক্যাটাগরিতে কুইজে সেরা ১০ জন এবং প্রজেক্টে সেরা দলগুলোকে দেওয়া হবে পুরস্কার। পুরস্কারের মধ্যে আছে সনদ, মেডেল, বই, বিজ্ঞান বাক্সসহ নানা উপহার। বিজয়ীরা রাজধানী ঢাকায় অনুষ্ঠিত জাতীয় উৎসবে অংশ নেওয়ার সুযোগ পাবে। সেখানে বিজয়ীদের জন্য থাকছে ল্যাপটপ, ট্যাবসহ আকর্ষণীয় পুরস্কার।
সারা দেশের স্কুলশিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানে উৎসাহী করে তুলতেই বিকাশ ও বিজ্ঞানচিন্তা এই উৎসবের আয়োজন করছে। এরই মধ্যে ঢাকা, রংপুর, রাজশাহী, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগে বিজ্ঞান উৎসবের আঞ্চলিক পর্ব শেষ হয়েছে। ২৫ অক্টোবর সিলেটে হবে পরবর্তী আঞ্চলিক উৎসব। সবশেষে জাতীয় পর্বের মধ্য দিয়ে সমাপ্তি ঘটবে এ আয়োজনের।













Leave a Reply