নিজস্ব প্রতিবেদক. ঢাকা
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্পষ্ট নির্দেশনা আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট বা সুবিধাভোগী কোনো ব্যক্তি বিএনপি কিংবা এর অঙ্গসংগঠনে পদ পাবে না। কিন্তু সেই নির্দেশনা যেন উপেক্ষিত হচ্ছে বিএনপিপন্থী কৃষিবিদ সংগঠন এ্যাব (AAB- Agriculturists Association of Bangladesh)–এ।
সেখানে অতীতে আওয়ামী রাজনীতিতে সম্পৃক্ত কিছু কর্মকর্তা এখন নিজেদের বিএনপি সমর্থক দাবি করে নেতৃত্বের আসনে বসার তৎপরতা চালাচ্ছেন এমন অভিযোগ উঠেছে দলীয় মহলে।
নূরে আলম সিদ্দিকী: ঘনিষ্ঠতা ঢাকতে বিএনপি মুখোশ
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হর্টিকালচার উইংয়ের উপপরিচালক নূরে আলম সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে অভিযোগ, ৫ আগস্টের আগে তিনি আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কর্মসূচিতে সক্রিয় ছিলেন।
তার ব্যক্তিগত সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টেও আওয়ামী ঘনিষ্ঠতার প্রমাণ পাওয়া যায়। দুর্নীতির অভিযোগে তার বিরুদ্ধে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সাবেক যুগ্মসচিব পরিতোষ হাজরার নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি হলেও রিপোর্টটি এখনও প্রকাশিত হয়নি।
অভিযোগ রয়েছে, বর্তমানে তিনি অর্থের বিনিময়ে বিএনপিপন্থী কৃষিবিদ সংগঠন ‘এ্যাব’-এর কেন্দ্রীয় পদ পাওয়ার চেষ্টা করছেন।
তার সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি মন্তব্য দিতে রাজি হননি।
বনি আমিন: মুজিব বন্দনাকারী থেকে বিএনপি দাবিদার
অতিরিক্ত উপপরিচালক (আমদানি), কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা বনি আমিন ৫ আগস্টের আগে আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে ভোট জালিয়াতি ও ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল তার বিরুদ্ধে।
খামারবাড়িতে টেন্ডারবাজি, বদলি বাণিজ্য ও কমিশন বাণিজ্যেরও অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, তিনি শরীফ নামে এক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগসাজশে ১.৫ কোটি টাকার অনিয়ম করেছিলেন, যা পরে ফেরত দিতে হয়।
দুদকে তার নামে মামলা চলমান। একসময় নিজেকে মুজিব বন্দনাকারী পরিচয়ে প্রচার করলেও এখন বিএনপি-ঘেঁষা পরিচয়ে এ্যাব-এর কেন্দ্রীয় পদে যোগদানের চেষ্টা চালাচ্ছেন তিনি।
বনি আমিনের ব্যক্তিগত ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
মুরাদুল হাসান: দুই রাজনীতির অভিজ্ঞ খেলোয়াড়
২০০১ সালে জামায়াতপন্থী ফোরামে যুক্ত হয়ে রাজনীতি শুরু করেন মুরাদুল হাসান, পরে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগে যোগ দেন এবং পুরস্কার স্বরূপ বরিশালে উপপরিচালকের পদ পান।
বর্তমানে তিনি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশাসন শাখায় উপপরিচালক হিসেবে কর্মরত। অভিযোগ রয়েছে, তার নেতৃত্বে আওয়ামী ঘনিষ্ঠ কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়েছেন এবং জাতীয়তাবাদী ঘরানার কর্মকর্তাদের বদলি ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সূত্র জানায়, তার সিন্ডিকেটে রয়েছেন বনি আমিন খান, কে এম বদরুল হক, নূরে আলম সিদ্দিকী ও হাবিব উল্লাহ, যারা বদলি ও পদায়নের বিনিময়ে লাখ লাখ টাকা আদায় করেন।
একসময় শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ সাবেক মন্ত্রী গাজী গোলাম দোস্তগীরকে স্বর্ণের নৌকা উপহার দিয়েছিলেন বলেও জানা গেছে।
বর্তমানে তিনি এ্যাব-এর কেন্দ্রীয় কমিটিতে নিজের অবস্থান নিশ্চিত করতে তদবির চালাচ্ছেন।
মুরাদুল হাসানের অফিসে যোগাযোগ করা হলেও তিনি উপস্থিত ছিলেন না; পরে ফোনেও তাকে পাওয়া যায়নি।
আবুল কালাম আজাদ: অভিযুক্ত হয়েও পদ প্রত্যাশা
খামারবাড়ির কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে কর্মরত প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর আবুল কালাম আজাদ জুলাই গণঅভ্যুত্থান চলাকালে পল্টন থানার ছাত্র হত্যা মামলার আসামি হিসেবে আলোচনায় আসেন।
আওয়ামী ঘনিষ্ঠ তদবিরে তিনি পার্টনার প্রকল্পে প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটরের দায়িত্ব পান। বর্তমানে তিনি অর্থ ও রাজনৈতিক যোগাযোগের মাধ্যমে বিএনপিপন্থী কৃষিবিদ সংগঠন এ্যাব-এ নিজের অবস্থান শক্ত করার তৎপরতায় রয়েছেন।
তার কার্যালয়ে মন্তব্যের জন্য যোগাযোগ করা হলেও তিনি কথা বলতে রাজি হননি এবং লিখিত মন্তব্যও দেননি।
বিএনপি ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অবস্থান
বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তর সূত্র জানায়, দুই সপ্তাহের মধ্যে ৫১ সদস্য বিশিষ্ট নতুন কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
তিনি ত্যাগী সদস্যদের মূল্যায়ন ও আওয়ামী সুবিধাভোগীদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে কঠোর অবস্থান নিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
এক কেন্দ্রীয় দায়িত্বশীল নেতা বলেন, যারা আওয়ামী সুবিধা ভোগ করে এখন বিএনপির পতাকা তুলতে চাইছেন, তাদের ব্যাপারে সংগঠন সতর্ক আছে। যাচাই-বাছাই শেষে পদ দেওয়া হবে।
অন্যদিকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান,
অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রাজনৈতিক পদে জড়িত থাকা বা সেটি ব্যবহার করে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ পাওয়া গেলে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিএনপি নেতৃত্বের কঠোর নির্দেশনা সত্ত্বেও ‘এ্যাব’-এর ভেতরে আওয়ামী ঘনিষ্ঠ কিছু কর্মকর্তার তৎপরতা থামছে না। দলীয় পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ত্যাগীদের মূল্যায়ন ও রাজনৈতিক সুযোগসন্ধানীদের প্রতিহত করা এখন বিএনপিপন্থী কৃষিবিদ সংগঠনের জন্য বড় পরীক্ষা।












Leave a Reply