অনলাইন ডেস্ক :
অনেক সময় দেখা যায় বারবার চেষ্টার পরও কাজে মনোযোগ দেওয়া সম্ভব হয় না। একটু কাজ করতে বসলেই মনসংযোগে ব্যাঘাত ঘটছে। কাজে মন দিতে না পারায় শেষ করতে পারছেন না। এই সমস্যার দুর্দান্ত সমাধান হতে পারে আপনার হাতের নাগালেই থাকা একটি পানীয়।
কী সেই পানীয়, বিস্তারিত জানুন আজকের প্রতিবেদনে।
আসলে সকালের শুরুটাকে প্রাণবন্ত করতে অনেকেই প্রথমে হাতে তুলে নেন এক কাপ গরম কফি। মনে করা হয়, দিনের কাজের গতিকে ঠিক রাখতে সকালে ক্যাফেইন নাকি ত্রাতা। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কফি ঠিক কোন সময়ে খাওয়া হচ্ছে, সেটা আপনার ফোকাস, শক্তি এবং অ্যালার্টনেসের ওপর বড় প্রভাব ফেলতে পারে।
অনেকে ঘুম থেকে উঠেই কফি খেয়ে নেন, আবার কেউ একটু দেরিতে খান। কিন্তু কোন সময়টা সত্যিই বেশি উপকারী, সকাল ৬.৩০-৮টা, নাকি ৯-১১টা, তা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন ছিল। শরীরের সার্কাডিয়ান রিদম বা শরীরের অভ্যন্তরীণ ঘড়ির সঙ্গে কফির টাইমিং কতটা মিল খাচ্ছে, সেটাই এখানে আসল। তবে বিশেষজ্ঞরা এটা নিশ্চিত যে কফি খেলে বেশি ফোকাস পাওয়া যায়।
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, মানুষ ঘুম থেকে উঠার পরপরই শরীরে কর্টিসল নামের একটি হরমোন স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে যায়। এই কর্টিসলই আমাদের শরীরকে জাগিয়ে তোলে, অ্যালার্ট করে, শক্তি জোগায় এবং ফোকাস বাড়ায়। ফলে ঘুম থেকে উঠেই কফি খেলে ক্যাফেইন তেমন কোনো বাড়তি সুবিধা দিতে পারে না। বরং এই সময় ক্যাফেইন নেওয়া হলে শরীরের স্বাভাবিক কর্টিসল চক্রে কিছুটা গোলমাল হতে পারে।
অনেকের ক্ষেত্রে এই সময় কফি খাওয়া শরীরকে অস্বস্তিকরভাবে উত্তেজিত বা জিটারির দিকে ঠেলে দেয়, আবার কারো ক্ষেত্রে মাঝসকালেই এনার্জি ক্র্যাশ দেখা যায়।
খুব ভোরে যারা কাজ শুরু করেন বা ৫টার আগে ওঠেন, তারা হয়তো স্বল্পমেয়াদি উপকার পেতে পারেন। তবে সাধারণ প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য এটি সঠিক সময় নয় বলেই বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন।
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, সকাল ৯টা থেকে ১১টার মধ্যে শরীরের কর্টিসল লেভেল একটু কমতে শুরু করে। এই সময়ই মস্তিষ্ক তুলনামূলকভাবে ক্যাফেইনের প্রতি বেশি সংবেদনশীল হয়ে ওঠে। ফলে এই সময় কফি খেলে শরীরে ক্যাফেইনের প্রভাব আরো ভালোভাবে কাজ করে। অ্যালার্টনেস বাড়ে, মনঃসংযোগ ভালো হয়, আর দিনের কাজের গতি দীর্ঘক্ষণ ধরে ভালো থাকে।
যারা খুব সকালে কফি খেয়ে ফেলেন, তারা দুপুরের আগেই ক্লান্তি বা হালকা ঘুম ঘুম ভাব অনুভব করেন। কিন্তু ৯-১১টার মধ্যে কফি খেলে এই সমস্যাও অনেকাংশে কমে যায়, কারণ কফি তখন শরীরের স্বাভাবিক ছন্দের সঙ্গে মিল রেখে কাজ করে।
সকালের কফির সঠিক সময় নির্ধারণের ক্ষেত্রেও কিছু বিষয় মাথায় রাখা জরুরি। প্রথমত, কফি ঘুম ভাঙার পর অন্তত দুই থেকে তিন ঘণ্টা পরে খাওয়া হলে সেটি শরীরের চক্রের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলে। দ্বিতীয়ত, খালিপেটে কফি খেলে অনেকের এসিডিটি বা হালকা কম্পন হতে পারে, ফলে সকালে ব্রেকফাস্টের পর বা হালকা খাবারের পরে কফি খাওয়া বেশি উপযোগী।
তৃতীয়ত, অনেকেই মনে করেন যে বেশি কফি মানেই বেশি ফোকাস, কিন্তু দিনে দুই কাপের বেশি কফি সাধারণত প্রয়োজন হয় না। অতিরিক্ত ক্যাফেইন শরীরে উলটো প্রভাব ফেলতে পারে। এতে হৃদস্পন্দন বেড়ে যেতে পারে, শরীরে অস্বস্তি হতে পারে অথবা ঘুমের ব্যাঘাত ঘটতে পারে।
আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো কফির শেষ কাপ কখন নেওয়া হচ্ছে। বিকেল ৩-৪টার পরে ক্যাফেইন খেলে ঘুমের মান কমে যেতে পারে। যারা রাতের ঘুমে সমস্যা অনুভব করেন, তাদের ক্ষেত্রে রাতের অ্যালার্টনেস আরো বেড়ে যায়, ফলে শরীর বিশ্রাম নেওয়ার সময়ও স্থির হতে পারে না। কফির মূল উদ্দেশ্য যদি দিনের শুরুতে মনঃসংযোগ এবং এনার্জি বাড়ানো হয়, তবে দিনের শেষ ভাগে খেলে তার প্রভাব বাড়ে। সেটা যেন ঘুমে বাধা না দেয়, তা নিশ্চিত করাই বুদ্ধিমানের কাজ।
যারা পড়াশোনা, কর্পোরেট কাজ, শিফট ডিউটি বা উচ্চ মনঃসংযোগের পরিবেশে কাজ করেন, তাদের জন্য কফির সময় নির্ধারণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনেকেই মাঝসকালে ফোকাস হারানোর অভিযোগ করেন, যেটি প্রায়ই খুব সকালে কফি খাওয়ার কারণেই ঘটে। কিন্তু ৯–১১টার মধ্যে কফি খেলে দিনের মাঝামাঝি অংশে এনার্জি ধরে রাখা সহজ হয়। দ্রুত ক্লান্ত হয়ে পড়েন এমন ব্যক্তিদের জন্যও এটি কার্যকরী।
শরীরের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কফি খাওয়া মানেই কম জিটার, কম ক্র্যাশ, আর বেশি স্থায়িত্বের এনার্জি—সব মিলিয়ে এতে দৈনন্দিন কাজের কার্যকারিতা বাড়ে। এমনটাই জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
সূত্র : ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস













Leave a Reply