স্বাস্থ্য ডেস্ক:
অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনযাত্রার কারণে গোপনেই শরীরে বাসা বাঁধে নানা রোগ। ডায়াবেটিসও এমনই একটি রোগ, যার প্রধান কারণ আপনার অস্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা। ব্লাড সুগার বাড়ার কারণে শরীরে নানা জটিলতা দেখা দেয়। ডায়াবেটিস শরীরের গুরুত্বপূর্ণ সব অঙ্গে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিসে ভুগলে চোখ, কিডনি ও স্নায়ুতন্ত্রের নানা ক্ষতি হয়। ডায়াবেটিসের কারণে চোখের ভেতর প্রেসার বেড়ে যেতে পারে। একে বলা হয় ডায়াবেটিসজনিত গ্লুকোমা।
ডায়াবেটিস রোগীদের গ্লুকোমার ঝুঁকি বেশি, অল্প বয়স থেকে সাবধান না হলেই হারাতে পারেন দৃষ্টিশক্তি। গ্লুকোমা যে কোনও বয়সেই হতে পারে। দৃষ্টিশক্তি ভাল বলেই এই রোগ হানা দেবে না, এমন কোনও মানে নেই। জেনে নিন কোন কোন রিস্ক ফ্যাক্টর গ্লকোমার সম্ভাবনা বাড়িয়ে তুলতে পারে।
সঠিক সময়ে ধরা না পড়লে, চিকিৎসা শুরু না করলে এই রোগ দৃষ্টিশক্তি কেড়ে নিতে পারে। চোখের মধ্যে যে অংশ দিয়ে তরল চলাচল করে, সেই রাস্তা বন্ধ হয়ে গেলে তা জমে চোখের অপটিক স্নায়ুর উপর বাড়তি চাপ সেই চাপ বাড়তে থাকলে ধীরে ধীরে দৃষ্টিশক্তি কমতে থাকে, পরবর্তী কালে যা অন্ধত্ব ডেকে আনে। প্রাথমিক ভাবে ক্ষতিটা শুরু হয় পরিধির চারপাশ থেকে, তাই গ্লকোমায় আক্রান্ত রোগীদের ‘সাইড ভিশন’ নষ্ট হতে থাকে। চোখের ভিতর পানি তৈরি হতে থাকে, অথচ বেরোনোর জায়গা পায় না— এর ফলেই তা দুর্বল জায়গাগুলোতে চাপ সৃষ্টি করতে থাকে।
গ্লুকোমা যে কোনও বয়সেই হতে পারে। দৃষ্টিশক্তি ভাল বলেই এই রোগ হানা দেবে না, এমন কোনও মানে নেই। চোখে ছানি পড়ার সঙ্গে গ্লুকোমার কোনও রকম সম্পর্ক নেই। সমস্যা থাকুক বা না থাকুক, বছরে অন্তত একবার চোখ পরীক্ষা করালেই গ্লুকোমার হাত থেকে রেহাই পেতে পারেন।
পরিবারে কারও বা নিজের ডায়াবেটিস কিংবা উচ্চ রক্তচাপ থাকলে গ্লুকোমার আশঙ্কা বাড়তে পারে।
যারা স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ নেন নিয়মিত, তাঁদেরও গ্লুকোমায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকতে পারে। যাঁরা নেন ইনহেলার, তাঁদের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। কোনও সময়ে চোখে গুরুতর চোট-আঘাত লাগলে পরবর্তী কালে সেখান থেকেও গ্লুকোমা হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়।
চিকিৎসক এক বার পাওয়ার সেট করে দেওয়ার পরে সাধারণত আর এক-দেড় বছরের মধ্যে তা বাড়ার আশঙ্কা থাকে না। তবে যদি মাস কয়েকের মধ্যে বার বার পাওয়ার বেড়ে যায়, তা গ্লুকোমায় আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ হতে পারে।
গ্লুকোমার মতো অসুখ সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব নয়। এই সমস্যা ধরা পড়ার পরে চিকিৎসা শুরু হলেও ১০ শতাংশ ক্ষেত্রে দৃষ্টিশক্তি হারানোর আশঙ্কা থেকেই যায়। তবে প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে এই রোগ নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
গ্লুকোমার অন্যতম লক্ষণ:
চোখ ব্যথা ও লাল হওয়া। চোখ আলোর প্রতি সংবেদনশীল হয়ে পড়া। উজ্জ্বল কিংবা একটু কম আলোয় দেখতে অসুবিধা হওয়া। আলোর চারপাশে বিভিন্ন বাড়তি রং দেখতে পাওয়া। চোখ, মাথা ও কপালব্যথা। চোখ ফোলা। বমি বমি ভাব। ঘন ঘন চশমার পাওয়ার বদল।
সব রোগীরই যে একই ধরনের লক্ষণ দেখা যাবে, তা কিন্তু নয়। আবার এসব লক্ষণ যে কেবল গ্লুকোমাতেই হয়, তা–ও নয়। তাই লক্ষণ দেখা দিলে আতঙ্কি হবেন না। বরং দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। প্রাথমিক অবস্থায় গ্লুকোমার চিকিৎসা শুরু করলে অন্ধত্বের ঝুঁকি কমে যায়। অনেক ক্ষেত্রে কেবল ওষুধের মাধ্যমেই চিকিৎসা সম্ভব। তবে কারও কারও লেজারের মাধ্যমে চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে। জটিল ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচার প্রয়োজন হতে পারে।
গ্লুকোমা থেকে একেবারে নিস্তার পাওয়া সম্ভব নয়, তবে যাতে আরও ক্ষতি না হয়, সে ব্যবস্থা নিলে গ্লুকোমা নিয়ন্ত্রণের মধ্য দিয়ে সুস্থ্য থাকা সম্ভব।













Leave a Reply