রংপুরে প্রতিবন্ধীতা-অন্তর্ভুক্তিমূলক স্বাস্থ্য উদ্যোগ কর্মসূচী অনুষ্ঠিত

নিজস্ব প্রতিবেদক :

পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন তরুণদের সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর মাধ্যমেই সম্ভব অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং সার্বজনীন স্বাস্থ্যখাত বিনির্মাণ”—এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে অপরাজেয় তারুণ্য কার্যালয়ে শনিবার সকালে অনুষ্ঠিত হলো “প্রতিবন্ধীতা-অন্তর্ভুক্তিমূলক স্বাস্থ্য উদ্যোগঃ স্বাস্থ্যব্যবস্থা পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন তরুণদের অন্তর্ভুক্তি কর্মসূচী”।

সকাল সাড়ে ১০টায় শুরু হওয়া এ কর্মসূচীতে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কমিউনিটির বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন তরুণ-তরুণীরা অংশ নেন। অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন রংপুর প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রের Disability Affairs Officer জনাব মাসুদ রানা, মিঠাপুকুর প্রতিবন্ধী উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি জনাব মহসিন আলী, দেশ নিউজ বিডি ২৪-এর রংপুর প্রতিনিধি জনাব মেহজাবিন মৌ এবং আরএইচস্টেপ রংপুর মেডিকেল কলেজ শাখার একাউন্টস অ্যান্ড এডমিন অফিসার জনাব তৌফিক আহম্মেদ।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অপরাজেয় তারুণ্য রংপুর শাখার প্রজেক্ট অফিসার জনাব অনিমেষ রায় এবং সঞ্চালনা করেন ইয়ুথ অফিসার জনাব স্বর্ণালী আচার্য।

প্রধান অতিথি জনাব মাসুদ রানা বলেন, “স্বাস্থ্যব্যবস্থার যেকোনো নীতি বা পরিকল্পনা প্রণয়নের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী তরুণদের বাস্তব অভিজ্ঞতা ও মতামত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাদের জীবনের প্রতিদিনের চ্যালেঞ্জগুলোকে বোঝা ছাড়া টেকসই স্বাস্থ্য ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব নয়। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন তরুণদের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে পারলেই স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে সার্বজনীন এবং সবার জন্য সমানভাবে গ্রহণযোগ্য করা যাবে।”

মিঠাপুকুর প্রতিবন্ধী উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি মহসিন আলী বলেন, “আমরা চাই তরুণরা শুধু স্বাস্থ্যসেবার ভোক্তা হয়ে না থেকে নীতি প্রণয়নের প্রক্রিয়ায়ও যুক্ত থাকুক। কারণ তারাই সবচেয়ে ভালো জানে, তাদের প্রয়োজন কোথায় এবং কেমন সেবা তাদের জন্য কার্যকর হবে। তরুণদের সক্ষমতাকে কাজে লাগানো হলে সমাজে প্রতিবন্ধীতা আর কোনো বাধা থাকবে না, বরং তা একেকটি সম্ভাবনায় রূপ নেবে।”

দেশ নিউজ বিডি ২৪-এর প্রতিনিধি মাজহাবিন মৌ বলেন, “মিডিয়ার একটি বড় দায়িত্ব হলো সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তনের বার্তা পৌঁছে দেওয়া। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন তরুণদের গল্প এবং তাদের অর্জনগুলো আমরা তুলে ধরতে পারলে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন হবে। গণমাধ্যম কেবল প্রতিবেদন নয়, বরং জনসচেতনতা তৈরির হাতিয়ার হিসেবেও কাজ করতে পারে। তাই এ ধরনের কর্মসূচীকে কাভার করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।”

আরএইচস্টেপ রংপুর মেডিকেল কলেজ শাখার একাউন্টস অ্যান্ড এডমিন অফিসার তৌফিক আহম্মেদ বলেন, “RHSTEP সবসময় তরুণদের পাশে ছিল এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন তরুণদের জন্য স্বাস্থ্যসেবা শুধু অধিকার নয়, এটি মানবিক মর্যাদার অংশ। তাই আমরা চাই স্বাস্থ্য খাতের প্রতিটি উদ্যোগে তাদের কণ্ঠস্বর শোনা হোক। RHSTEP বিশ্বাস করে—অন্তর্ভুক্তিমূলক স্বাস্থ্যব্যবস্থা গড়ে উঠলে পুরো সমাজই উপকৃত হবে।”

অংশগ্রহণকারী তরুণ-তরুণীরাও এ কর্মসূচী নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। একজন তরুণী বলেন, “আমাদের মতামত শোনার সুযোগ পাওয়া আমাদের আত্মবিশ্বাস অনেকটা বাড়িয়েছে। আগে মনে হতো আমরা অবহেলিত, কিন্তু আজকের আলোচনায় বুঝলাম—আমাদের কথাও গুরুত্বপূর্ণ।”
আরেক তরুণ জানান, “এমন কর্মসূচী হলে আমরা স্বাস্থ্যসেবায় নিজেদের প্রয়োজনগুলো আরও স্পষ্টভাবে জানাতে পারি। এতে সমাজে আমাদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে।”

সমাপনী বক্তব্যে সভাপতি অনিমেষ রায় বলেন, অপরাজেয় তারুণ্য প্রতিবন্ধী তরুণদের সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক করার উদ্যোগ অব্যাহত রাখবে। আমরা চাই—তরুণরা শুধু অংশগ্রহণকারী নয়, বরং পরিবর্তনের চালিকাশক্তি হয়ে উঠুক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *