অনলাইন ডেস্ক
সবজি ও পাকা ফল হিসেবে পেঁপে বেশ জনপ্রিয়। শুধু পরিবারের চাহিদা মেটানোর জন্য একসময় বাড়ির আঙিনায় চাষ করা হত পেঁপে। সুস্বাদু এই ফলটি বাণিজ্যিকভাবে চাষ করে চমক সৃষ্টি করেছেন মাদারীপুরের শিবচর উপজেলায় কৃষি উদ্যোক্তা মো. মনির হোসেন। চাষ করে পেয়েছেন সফলতা।
তার বাগানের সারিবদ্ধ গাছে ঝুলছে ছোট-বড় সবুজ রঙের অসংখ্য পেঁপে। আকর্ষণীয় এসব পেঁপে ‘শাহী’ নামে পরিচিত। এ পেঁপে শুধু বাগানের সৌন্দর্যই বৃদ্ধি করেনি, সবুজে মোড়ানো পেঁপেতে স্বপ্ন দেখছেন তিনি। এ ছাড়া মো. মনির হোসেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ শিবচর উপজেলা শাখার সেক্রেটারি পদে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, পেঁপে এখন আর শুধু আঙিনার ফল নয়, বরং হয়ে উঠছে বাণিজ্যিক সম্ভাবনার নতুন খাত। তবে পেঁপে চাষে অর্থনৈতিকভাবে সরকারি সহযোগিতা পেলে দেশের বেকার সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় ৫০ হেক্টর জমিতে পেঁপে চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে ভান্ডারীকান্দি ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি পেঁপে চাষ করা হয়েছে।
জাতগুলোর মধ্যে রয়েছে উফশী জাতের শাহী, রেড লেডি এবং স্থানীয় জাত। এসব পেঁপে চাষিদের নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, দ্বিতীয়খণ্ড ইউনিয়নের কাচাই মাদবরের কান্দি এলাকায় ৪৫ শতক জমিতে ৩৮০টি শাহী জাতের পেঁপের চারা লাগানো হয়েছে। সারি সারি পেঁপে গাছ। প্রতিটি গাছে ঝুলছে অসংখ্য পেঁপে।
থোঁকার মাঝে মাঝে দু’চারটি পাকা পেঁপেও ঝুলছে। সেখান কাঁচা-পাকা ও ছোট-বড় পেঁপের সমাহার। আকার ভেদে পেঁপর ওজন ২ থেকে ৪ কেজি করে। এই বাগানে ফলের বৈচিত্র্য ও সম্পূর্ণতা দেখে বোঝা যায়, চাষে যথাযথ যত্ন ও পরিচর্যা নেওয়া হয়েছে।
বাগানে কথা হয় উদ্যোক্তা মনির হোসেনর সঙ্গে। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমি ৪৫ শতক জমিতে ৩৮০টি শাহী জাতের পেঁপে চাষ করেন। এতে মোট প্রায় এক লাখ ২৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। কয়েক দফায় এক লাখের অধিক টাকার পেঁপে বিক্রি করেছি। মৌসুম জুড়ে বাগান থেকে পেঁপে বাজারজাত করে আরো লাখের বেশি টাকা আয় করতে পারব আশা করি। উপজেলা উপকৃষি কর্মকর্তা মিঠুন সাহা আমাকে সবসময় পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। বাগানে এখনো অনেক পেঁপে রয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘অন্য ফসলের তুলনায় পেঁপে চাষে খরচও তুলনামূলক কম। পাইকাররা এখন বাগান থেকেই পেঁপে কিনছে। যে কারণে কৃষকদের বাজারে নিয়ে যাওয়ার ঝামেলা থাকছে না। এলাকার অনেক কৃষক পেঁপে বাগান করতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। আগামীতে আরো বেশি জমিতে পেঁপের বাগান করার পরিকল্পনা আছে।’
উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি অফিসার মিঠুন সাহা বলেন, ‘উদ্যোক্তা মো. মনির হোসেনের পেঁপে চাষ শুরু থেকেই তাকে বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দিয়ে আসছি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে পুষ্টিমান সমৃদ্ধ পেঁপে চাষে ভাগ্য বদলে ফেলা যায়। তার পেঁপে চাষ দেখে এলাকার অন্যরাও এগিয়ে আসবে। বেকার যুবকরা পেঁপে চাষে এগিয়ে এলে তারাও অনেক লাভবান হবেন।’
শিবচর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রফিকুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘পেঁপেতে প্রচুর পুষ্টি উপাদান রয়েছে। পেঁপে চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়াতে সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে। এতে উন্নত ফলনশীল পেঁপে চাষে কৃষকরা আগ্রহী হয়ে উঠছেন। এভাবে কৃষির প্রতি আগ্রহী তরুণরা নিরাপদ বিষমুক্ত সবজি চাষ ও উৎপাদনে ভোক্তাদের চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম হবেন।’
তিনি আরো জানান, আশ্বিন ও পৌষ মাস পেঁপের বীজ বপনের উত্তম সময়। বপনের ৪০-৬০ দিন পর চারা রোপনের উপযোগী হয়। পেঁপে গাছে সাধারণত ৫-৭ মাসের মধ্য ফুল আসে এবং সাধারণত রোপণের ৬-৮ মাসের মধ্যে ফল সংগ্রহ করা যায়।। শাহী পেঁপে ও রেড লেডি জাত ভাইরাস প্রতিরোধী হওয়ায় কৃষকদের এ জাত চাষ করতে পরামর্শ দেন তিনি।













Leave a Reply