পাটকাঠিতেই শত কোটি টাকা আয়ের সম্ভাবনা

অনলাইন ডেস্ক

এ বছর পাট আবাদ করে এর সোনালী আঁশের দাম একটু কম পেলেও পাটকাঠির দাম ভাল পাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন ফরিদপুরের সালথা ও নগরকান্দা উপজেলার কৃষকরা। এতে মুখে হাসি ফুটেছে তাদের।

জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, সোনালি আঁশ উৎপাদনে খ্যাতির শীর্ষে রয়েছে ফরিদপুর। এ জেলায় সবচেয়ে বেশি পাটের চাষ হয় সালথা ও নগরকান্দা উপজেলার ১৮টি ইউনিয়নে।
সূত্র জানায়, বর্তমানে পাটকাঠি দিয়ে কার্বন পেপার, কম্পিউটার প্রিন্টার ও ফটোকপি মেশিনের কালি, আতশবাজি ও ফেসওয়াশের উপকরণ, মোবাইলের ব্যাটারি, প্রসাধনী পণ্য, এয়ারকুলার, পানির ফিল্টার, বিষ ধ্বংসকারী ওষুধ, জীবন রক্ষাকারী ওষুধ, দাঁত পরিষ্কারের ওষুধ ও ক্ষেতের সার উৎপাদনের কাঁচামাল তৈরি হচ্ছে। এ কারণে বিশ্ববাজারে এর ব্যাপক চাহিদা।

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার পাটের ভালো ফলন হয়েছে। পাট উৎপাদনে যে হারে খরচ বেড়েছে, ঠিক সেভাবে বাড়েনি বাজারদর।

তাই এ মৌসুমে পাটকাঠিতে সেই ক্ষতির কিছুটা পুষিয়ে নিতে চেষ্টা করছেন তারা। তারা জানান, দুই উপজেলার সর্বত্র এখন চলছে পাটকাঠির পরিচর্যা ও কেনা-বেচা। এখন পাটকাঠির বহুমুখী ব্যবহার বেড়েছে। পাটের পাশাপাশি পাটকাঠিও সমান গুরুত্ব পাচ্ছে।

দূর-দূরান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা এই দুই উপজেলায় এসে পাটকাঠি কিনছেন, কৃষক দামও পাচ্ছে বেশ।
সম্প্রতি সরেজমিনে সালথা ও নগরকান্দার কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বাড়ির সামনে, পাকা সড়ক কিংবা মাঠ-ঘাট যেখানে চোখ যায় সেখানেই চোখে পড়ে পাটকাঠি শুকানো ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ। ১০০ আঁটি পাটকাঠি বিক্রয় হচ্ছে প্রকারভেদে ৮০০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকায়। সালথা ও নগরকান্দায় এক হেক্টর জমিতে উৎপাদিত পাট থেকে গড়ে ১৫ হাজার টাকার কাঠি বের হচ্ছে।

সালথার পাটচাষি হাফেজ মোল্যা বলেন, পাটের বর্তমান যে বাজারমূল্য, তাতে খুব একটা লাভের মুখ দেখতে পাচ্ছি না।

তবে পাটকাঠির মূল্য আগের চেয়ে অনেক বেশি। তাই পাটকাঠিতে কিছুটা হলেও ঘুরে দাঁড়াতে পারব। তিনি বলেন, আগে পাটকাঠির ব্যবহার বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ছিল জ্বালানি, পানের বরজে আর ঘরের বেড়া তৈরিতে। কিন্তু এখন আর মূল্যহীনভাবে পড়ে থাকে না পাটকাঠি। বিশ্ববাজারে এর চাহিদা বাড়ায় আঁশের পাশাপাশি কাঠির দামও ভালো পাওয়া যাচ্ছে।
নগরকান্দার তালমা গ্রামের কৃষক আবু তালেব মোল্যা বলেন, পাটকাঠি শুকিয়ে এখন আমরা স্তূপ করে রেখেছি। প্রতিদিনই কিনতে মহাজনরা লোক পাঠাচ্ছেন। দামে পোষালেই ছেড়ে দেব। এখন ১০০ আটি এক হাজার ৬০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

সাতক্ষীরা এলাকা থেকে আসা পাটকাঠি ব্যবসায়ী মোস্তফা শেখ বলেন, সাত বছর ধরে পাটকাঠির ব্যবসা করছি। আগে সালথা ও নগরকান্দা থেকে পাটকাঠি কম দামে কিনে বেশি দামে বিক্রি করতাম। তবে বর্তমানে ফরিদপুরে অর্ধশতাধিক কার্বন কারখানা গড়ে উঠেছে। কিন্তু ফরিদপুর অঞ্চলের পাটকাঠি দিয়ে এসব কারখানার চাহিদা মেটানো কষ্টসাধ্য। তাই আমরা আর আগের মতো পাটকাঠি কিনতে পারি না। কারণ বর্তমানে পাটকাঠির দাম ও চাহিদা দুটোই বেশি। অনেকেই এখন পাটকাঠির ব্যবসা করে জীবকা নির্বাহ করছে।

সালথা ও নগরকান্দা উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্র জানায়, সালথা ও নগরকান্দায় প্রায় ২৫ হাজার হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। সেখান থেকে উৎপাদিত পাটকাঠি কৃষকরা অন্তত শত কোটি টাকায় বিক্রি করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

নগরকান্দা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ তিলোক কুমার ঘোষ কালের কণ্ঠকে বলেন, কৃষি বিভাগের স্বতঃস্ফূর্ত ও সার্বক্ষণিক সহযোগিতার মাধ্যমে উৎকৃষ্টমানের পাটের পাশাপাশি পর্যাপ্ত পরিমাণে পাটকাঠি উৎপাদন হয়েছে। পাটকাঠির রয়েছে বৈচিত্র্যময় স্থানীয় পর্যায়ে ব্যবহারের পাশাপাশি বাণিজ্যিকভাবে শিল্প পর্যায়ে ব্যবহার। পাটকাঠি দিয়ে আসবাবপত্র, কাগজ, কালি তৈরিসহ বহুবিধ ব্যবহার রয়েছে। এ কারণে এর বাজারমূল্য দিন দিন বাড়ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *