নিজস্ব প্রতিবেদক:
রংপুর বিভাগের ৮ জেলার ১ হাজার ৯শ ৩৯ টি রেল ক্রসিংয়ের মধ্যে মাত্র ৪১৩ টিতে গেট ও গেটম্যান রয়েছে । বাকি ১ একহাজার ৫শ রেল ক্রসিং রয়েছে পুরোপুরি অরক্ষিত অবস্থায়। ফলে এসব রেলক্রসিংএ প্রতিনিয়ত ঘটছে ছোট বড় দূর্ঘটনা। স্থানীয়দের অভিযোগ, রেল বিভাগের কর্মকর্তাদের কাছে অনুরোধ করেও এর কোন সমাধান মিলছে না। উন্মুক্ত রেলক্রসিং এ সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে নিজ দায়িত্বে চলাচলের দায়িত্ব দিয়ে দায় সেরেছে রেলওয়ে কতৃপক্ষ। প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটলেও টনক নড়ছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।
রেলওয়ে সৈয়দপুর জেলায় গত ৩ বছরে রেলে কাটা পড়ে প্রাণ গেছে ২৫১ জনের। এর মধ্যে ২০২২- ৯২ জন। ২০২৩- ১০১ জন। ২০২৪- ৫৮ জন। যার বেশির ভাগ দূর্ঘটনাই ঘটেছে এসব অরক্ষিত রেলক্রসিং-এ। স্থানীয়দের অভিযোগ, রেলওয়ে কতৃপক্ষকে বার বার জানালেও কোন সমাধান মিলেনি।
লালমনিরহাট রেলওয়ে ডিভিশনে ৫৪০ কিলোমিটার রেলপথে রেল ক্রসিং এর সংখ্যা ১ হাজার ৯শ ৩৯ টি। এর মধ্যে মাত্র ৪১৩ টিতে গেট ও গেটম্যান রয়েছে। ১১ শ৬৬ টি রেল ক্রসিং গেট থাকলেও নেই গেটম্যান। আর ৩৬০ টিতে গেট ও গেটম্যান নেই ছাড়াই চলছে। গ্রাফিক্স -২
রংপুর বিভাগের ৮ জেলায় মোট রেলক্রসিং – ১ হাজার ৯ শত ৩৯ টি। গেট ও গেটম্যান রয়েছে – ৪ শত ১৩ টিতে। গেট রয়েছে, গেটম্যান নেই – ১ হাজার ১ শত ৬৬ টিতে। গেট ও গেটম্যান নেই – ৩ শত ৬০ টিতে।
বিগত সরকার রেল উন্নয়নে হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করা হলেও কেন এই বিষয়ে গুরুত্ব দেয়নি তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। আর এ কারণে গত এক বছরে ৩৭টি প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে এবং আহত হয়েছেন ১৯৭ জন। লালমনিহাট রেল সূত্রে জানা গেছে, এসব ক্রসিংয়ের মধ্যে ৮৫টির দায়িত্ব পালন করছেন রেলওয়ের নিয়মিত স্টাফ, ১ শত ৩৫টি চলছে দিনমজুরির ভিত্তিতে আর বাকিগুলো রয়েছে অরক্ষিত।
রেলওয়ের এক জরিপে দেখা গেছে, অরক্ষিত এসব ক্রসিং দিয়ে গত এক বছরে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে ৩৭টি, আহতের সংখ্যা ১৯৭ জন। জানা গেছে, গেটম্যানবিহীন ক্রসিং গেটে সতর্কীকরণ নোটিশ বোর্ড আছে। এতে লেখা আছে গেট ও গেটম্যান না থাকায় নিজ দায়িত্বে সতর্কতার সঙ্গে রেললাইন পারাপার হতে হবে। তবে বৈধ রেলক্রসিংয়ে দুর্ঘটনা ঘটলে কর্তৃপক্ষের ওপর দায়িত্ব বর্তায় এবং তদন্ত করা হয়। দোষী রেলকর্মীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
লালমনিরহাট রেলওয়ের বিভাগীয় ম্যানেজার আব্দুল হাই জানান, রেলওয়ের অনুমতি ছাড়াই লাইনের ওপর অবৈধভাবে এলজিইডি, সড়ক ও জনপথ, জেলা পরিষদ, পৌরসভা ইউনিয়ন পরিষদ রাস্তা নির্মাণ করে এসব ক্রসিং তৈরি করেছে। এসব অবৈধ ক্রসিংয়ের সকল দায় দায়িত্ব তাদের ওপরই বর্তায়। এ জন্য রেলওয়ে দায়ী নয়।
তবে আশার কথা অরক্ষিত এসব লেভেল ক্রসিংয়ে সিগন্যালিক ব্যবস্থা চালুর জন্য গেট নির্মাণ ও গেটম্যান নিয়োগের ব্যাপারে ডিপিপি সংশিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। রেলওয়ে (পশ্চিম) লালমনিরহাটের অধীনে উত্তরের ৮ জেলায় ৫শত ২৫টি রেল ক্রসিংয়ের মধ্যে রংপুরে ৪৫টি, লালমনিরহাটে ২৫টি, কুড়িগ্রামে ৩০টি, বগুড়ায় ৫৫টি, দিনাজপুরে ৫২টি, গাইবান্ধায় ৩৬টি, ঠাকুরগাঁওয়ে ২৫টি ও পঞ্চগড়ে ৩৭টি চালু অবস্থায় রয়েছে।
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) আনজার মাহমুদ জানান, প্রতিটি রেলক্রসিংয়ে গেট নির্মাণ ও গেটম্যান নিয়োগ দেওয়া রেলওয়ের পক্ষে সম্ভব নয়। নিয়ম হলো যেসব সংস্থা রেলক্রসিংয়ের ওপর দিয়ে রাস্তা নির্মাণ করবে, তারাই গেট নির্মাণ ও গেটম্যান নিয়োগ করবে। কিন্তু তারা তা না করায় রেলক্রসিংগুলোতে দুর্ঘটনা ঘটছে। তাছাড়া অসতর্কতার সঙ্গে রেলক্রসিং পার হওয়াই দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ।













Leave a Reply