তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন ও পানির ন্যায্য হিস্সার দাবিতে জাবিতে মানববন্ধন

জাবি প্রতিনিধি

বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গের অন্যতম প্রধান তিস্তা নদীর ন্যায্য হিস্সা ও তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে।

শনিবার (১৮ অক্টোবর) বিকাল ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে এই মানবন্ধন করেন শিক্ষার্থীরা। এতে যোগ দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সোহেল আহমেদ, জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোহাম্মদ মাফরুহী সাত্তার, জাকসুর সহসভাপতি (ভিপি) আব্দুর রশিদ জিতু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) ফেরদৌস আল হাসান, শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক আবু ওবায়দা ওসামা, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল জাবি শাখার আহ্বায়ক জহির উদ্দিন মোহাম্মদ বাবরসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির ও বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের নেতৃবৃন্দ। এছাড়া, উপস্থিত ছিলেন আ ফ ম কামাল উদ্দিন হলের সহসভাপতি (ভিপি) জিএমএম রায়হান কবীরসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের উত্তরবঙ্গের ৮ জেলার শিক্ষার্থী ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

এসময় উপস্থিত বক্তারা উত্তরবঙ্গের কৃষি ও প্রকৃতি সংরক্ষণ এবং কোটি মানুষের জীবিকার উন্নয়নের লক্ষ্যে চীনের সহায়তায় আগামী নভেম্বরের মধ্যে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরুর তাগিদ দেন এবং ভারতের কাছ থেকে তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্সার দাবি জানান।

জাবি ছাত্রদলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন মোহাম্মদ বাবর বলেন, “গত ১৭ বছর ফ্যাসিস্ট খুনী হাসিনা সরকার দলীয় স্বার্থ অর্জন করতে বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থ বিসর্জন দিয়েছে। যখনই কোনো চুক্তি হয়েছে তখনই দেশের স্বার্থকে ভূলুণ্ঠিত করে তাদের প্রভু ভারতের মনজয় করার চেষ্টা করেছে। আমরা আশা করেছিলাম, এই অন্তবর্তী সরকারের সময়ে চীনা অর্থায়নে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়িত হবে কিন্তু দুঃখের বিষয় এখনও তারা কাজ শুরু করতে পারেনি। দেশের জাতীয় জিডিপির প্রবৃদ্ধি ও উত্তরবঙ্গের ৮ জেলার কৃষি ও জীবনমান উন্নয়নে সরকারকে অতিদ্রুত তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন ও তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্সা আদায়ে ভারতের সঙ্গে চুক্তি করতে হবে।”

জাকসুর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) ফেরদৌস আল হাসান বলেন, “তিস্তা শুধু উত্তরবঙ্গের বিষয় নয়, এটি দেশের জাতীয় অর্থনীতির প্রাণ। ভারত বর্ষায় কোনো সতর্কতা ছাড়াই পানি ছেড়ে লাখ লাখ ঘর-বাড়ি ডুবিয়ে দেয়, লক্ষ লক্ষ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট করে দেয়; আবার শুষ্ক মৌসুমে পানি বন্ধ করে সেচ ব্যবস্থা অকার্যকর করে ফেলে‌, ফলে কোনো ফসল আবাদ হয় না। বিগত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার অবৈধভাবে টিকে থাকতে তিস্তার ন্যায্য হিস্সা ও তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেনি। আমরা অন্তর্বর্তী সরকারকে নভেম্বরের মধ্যে চীনা অর্থায়নে এটি বাস্তবায়নের জোর দাবি জানাই।”

জাকসুর সহসভাপতি (ভিপি) আব্দুর রশিদ জিতু বলেন, “তিস্তা ভারত-বাংলাদেশের অভিন্ন নদী হওয়া সত্ত্বেও এটি পশ্চিমবঙ্গের জন্য আশীর্বাদ এবং বাংলাদেশের জন্য অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্ষায় আমাদের ডুবিয়ে মারে, শুষ্ক মৌসুমে পানি বন্ধ করে ফসল চাষাবাদে মারাত্মক বিঘ্ন ঘটায়। গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সরকারের কাছে আমরা আশা করেছিলাম, তারা তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবেন কিন্তু এই সরকার কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেয়নি। সরকারকে জোরালোভাবে বলতে চাই, ভারতীয় যেকোনো চাপকে উপেক্ষা করে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করুন; আমরা সারা দেশবাসী আপনাদের সঙ্গে থাকব।”

জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোহাম্মদ মাফরুহী সাত্তার বলেন, “তিস্তা শুধু উত্তরবঙ্গের নয়, এটি সারা বাংলাদেশের। ভারতকে বলতে চাই– আপনাদের আগ্রাসী নীতি যদি বন্ধ না হয়, আপনারা যদি বাংলাদেশের মানুষের আস্থা অর্জন করতে ব্যর্থ হন; তবে জেনে রাখুন– ৭১ এ যেভাবে পাকিস্তানকে প্রতিহত করেছি, আপনাদেরকেও সেভাবে প্রতিহত করতে প্রস্তুত আছি। আপনাদের স্বার্থ ছাড়া কখনও বাংলাদেশের পাশে দাঁড়াননি। যদি তিস্তা না থাকে, পদ্মা না থাকে তবে ভারতও থাকবে না। কারণ, মানুষ না বাঁচলে কেউ বাঁচতে পারবে না। একটি বছর যাতে পিছিয়ে না যায় সেজন্য আগামী নভেম্বরের মধ্যে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ শুরু করার জন্য বর্তমান সরকারকে আহ্বান জানাচ্ছি।”

জাবি উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সোহেল আহমেদ বলেন, “স্বাধীনতার পর থেকেই আমাদের মিত্র রাষ্ট্র (ভারত) মৈত্রীর পরিচয় দেন নাই। মহান মুক্তিযুদ্ধের ৯ নম্বর সেক্টর কমান্ডার মেজর জলিলকে গুম করার মাধ্যমে ভারতের লক্ষ্য উদ্দেশ্য বুঝা গিয়েছে। আমাদের মেরুদণ্ড সোজা করে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে হবে। তিস্তায় ভারতের বাঁধের কারণে উত্তরবঙ্গের ৮টি জেলা সরাসরি আক্রান্ত। প্রতিবেশী মৈত্রী দেশ হিসেবে তিস্তার ন্যায্য হিস্সা দিতে হবে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অন্তর্বর্তী সরকারকে বলতে চাই, নভেম্বরের মধ্যে চীনা সহায়তায় তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ শুরু করুন।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *