রাকসুতে পরাজিতদের মিলনমেলা, ঐক্যের সুরে নতুন প্রত্যয়

অনলাইন সংস্করণ

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শাবাশ বাংলাদেশ মাঠের বিকেলটা ছিল অন্য দিনের চেয়ে আলাদা। সূর্য ঢলে পড়ছে, মাঠে বাতাসে ভেসে আসছে হাসির শব্দ, গিটার বাজনার সুর আর তরুণদের উচ্ছ্বাস।

শনিবার (১৮ অক্টোবর) সন্ধ্যায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থীরা একত্র হয়েছিলেন এক ভিন্নধর্মী আয়োজনে— ‘পরাজিতদের মিলনমেলা’।

নির্বাচনের উত্তেজনা, প্রতিদ্বন্দ্বিতার হিসাব কিংবা ভোটের ফলাফলের গ্লানি পেছনে ফেলে তারা সাজিয়ে তুলেছিলেন বন্ধুত্ব ও ঐক্যের উৎসব। ছিল গান, খেলা, আড্ডা ও খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন। একসঙ্গে বসে হাসছিলেন সেই প্রার্থীরাই, যারা কয়েকদিন আগেও ছিলেন একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী।

মিলনমেলায় উপস্থিত ছিলেন রাকসুতে ছাত্রদল সমর্থিত ভিপি পদে পরাজিত প্রার্থী শেখ নূর উদ্দিন আবীর। হাতে মাইক্রোফোন, চারপাশে সহপাঠীদের উচ্ছ্বাস। তিনি বলেন, আমরা এখানে এক হয়েছি একটি উদ্দেশ্য নিয়ে— সুন্দর, নিরাপদ ও শিক্ষার্থীবান্ধব একটি ক্যাম্পাস গড়তে। আমরা হয়তো পরাজিত, কিন্তু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশ হিসেবে দায়িত্ব আমাদেরও কম নয়।

রাকসুতে পরাজিতদের মিলনমেলা, ঐক্যের সুরে নতুন প্রত্যয়
রাকসুর ভিপি, জিএস ও এজিএসের কার বাড়ি কোথায়
তিনি আরও বলেন, যারা বিজয়ী হয়েছেন, তারা যেন তাদের ইশতেহারের প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়ন করেন। আমরা যারা পরাজিত হয়েছি, তাদের কাজ হবে সেই বাস্তবায়ন তদারকি ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের সবার, তাই এক সঙ্গে কাজ করলেই এটি আরও সুন্দর হবে।

আবীর এ সময় নবনির্বাচিত ভিপি মোস্তাকুর রহমান জাহিদের প্রতিও আহ্বান জানিয়ে বলেন, ভাই জাহিদ নির্বাচনের আগে বলেছিলেন— যেই জিতি না কেন, আমরা সবাই এক সঙ্গে কাজ করব। আমরা চাই তিনি সেই কথাটা রাখুন। কারণ আমরা সবাই চাই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় হোক সম্প্রীতির ক্যাম্পাস।

স্বতন্ত্র এজিএস পদপ্রার্থী শাহ পরাণ মঞ্চে এসে হাসিমুখে বলেন, অনেকে বলেছে, আমরা নাকি হেরে গিয়ে কাঁদছি। সেই কান্নার সুরটা সবাইকে শুনিয়ে দিতেই আমাদের এ আয়োজন। তবে এই কান্না আনন্দের, একতার। আমরা সবাই এক সঙ্গে আছি, হারলেও মন হারাইনি।

তিনি আরও বলেন, আমাদের মূল লক্ষ্য ছিল সবাইকে এক জায়গায় নিয়ে আসা। এখানে খেলাধুলা, গান, গল্প সবকিছু আছে। আসলে আমরা বন্ধুত্বকে উদযাপন করতে চেয়েছি।

মিলনমেলায় উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় সংসদ ও বিভিন্ন হল সংসদের পরাজিত প্রার্থীরা। কেউ মঞ্চে গান গেয়েছেন, কেউ মজার গল্প শুনিয়েছেন, কেউ আবার বসে চুপচাপ শুনেছেন সহপাঠীদের হাসিঠাট্টা। একসময় যে প্রতিযোগিতা ছিল, সেটি রূপ নিয়েছে সহযোগিতায়।

মিলনমেলা শেষে সবাই একে অপরের কাঁধে হাত রেখে প্রতিজ্ঞা করেন— ‘আমরা সবাই মিলে গড়ব সুন্দর, সহমর্মী ও সম্প্রীতির রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *