সাইয়্যেদ শান্ত-পঞ্চগড় প্রতিনিধি:
এক বছর চার মাস আগে ৫৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ সম্পন্ন হওয়া অত্যাধুনিক ১৫০ শয্যার নয়তলা হাসপাতাল ভবনটি অবশেষে সীমিত পরিসরে চালু হচ্ছে—তাও সরকারি বরাদ্দ ছাড়াই। প্রয়োজনীয় চিকিৎসক, আসবাবপত্র ও চিকিৎসা সরঞ্জাম কেনার জন্য এখনো স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে কোনো অর্থ বরাদ্দ না আসায় স্থানীয় প্রশাসন ও সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ মিলে নিজস্ব উদ্যোগে তহবিল গঠন করে এই সেবা চালুর প্রস্তুতি নিয়েছে।
জানা গেছে, আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন ভবনটি নির্মাণ শেষে এক বছরেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও এখনো পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হয়নি। এতে পঞ্চগড় জেলার সাধারণ মানুষকে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হতে হচ্ছে এবং আর্থিক ক্ষতিও গুনতে হচ্ছে।
পাশেই অবস্থিত ১০০ শয্যার আধুনিক সদর হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ২৫০ থেকে ৩০০ রোগী ভর্তি থাকেন। তীব্র চিকিৎসক সংকটে অনেক রোগীকে মেঝে ও বারান্দায় চিকিৎসা নিতে হয়। অনেকে বাধ্য হয়ে চিকিৎসার জন্য দিনাজপুর, রংপুর বা ঢাকায় যাচ্ছেন—পথেই কেউ কেউ মৃত্যুবরণ করছেন। পরিচ্ছন্নতাকর্মীর ঘাটতির কারণে হাসপাতালের পরিবেশও নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর হয়ে পড়েছে।
এ অবস্থায়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নতুন ভবনে সীমিত পরিসরে চিকিৎসা কার্যক্রম শুরুর নির্দেশনা দিয়েছে, তবে অর্থ বরাদ্দ দেয়নি। স্থানীয়ভাবে অর্থ সংগ্রহের নির্দেশনা পেয়ে জেলা প্রশাসক সাবেত আলী ও সিভিল সার্জন ডা. মিজানুর রহমান মাঠে নেমেছেন।
জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে রাজনৈতিক নেতা, ব্যবসায়ী, ঠিকাদার, চেম্বার নেতা, এনজিও প্রতিনিধি ও বিভিন্ন পেশাজীবীর সঙ্গে মতবিনিময় করে ইতোমধ্যে ২১ লাখ ১৫ হাজার টাকার প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে। ‘স্বাস্থ্যসেবা সহায়তা তহবিল’ নামে গঠিত এ ফান্ড থেকে বেড ও চিকিৎসা সামগ্রী ক্রয় করা হবে। আপাতত ৫০ লাখ টাকা সংগ্রহের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
সিভিল সার্জন ডা. মিজানুর রহমান জানান, “স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী আপাতত সদর হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগ নতুন ভবনে স্থানান্তরের প্রস্তুতি চলছে। সেখানে ১০০ শয্যার মেডিসিন ইউনিট চালু করা হবে। ১৫ই নভেম্বর স্বাস্থ্য উপদেষ্টা এ হাসপাতালের উদ্বোধন করার কথা রয়েছে।”
নতুন ভবনে পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম শুরু করতে ৩৮৮ জন জনবল, আসবাবপত্র ও যন্ত্রপাতি কেনার জন্য ৭ কোটি ২৫ লাখ টাকার বরাদ্দ চেয়ে মন্ত্রণালয়ে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে বলেও তিনি জানান।
জেলা প্রশাসক সাবেত আলী বলেন, “চিকিৎসক দেওয়ার আশ্বাস আমরা পেয়েছি, তবে অর্থ বরাদ্দে সময় লাগবে। তাই স্থানীয়ভাবে তহবিল গঠন করা হয়েছে। আপাতত সংগৃহীত টাকা দিয়ে চিকিৎসা সেবা চালু করা হবে এবং ভবিষ্যতে দরিদ্র রোগীদেরও সহায়তা করা হবে।”
এনসিপি নেতা সারজিস আলম বলেন, “আমি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পাঁচটি দপ্তরে গিয়ে পঞ্চগড়ের স্বাস্থ্য খাতের দুরবস্থা তুলে ধরেছি। নভেম্বরের ২০ তারিখের মধ্যে ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ চিকিৎসক পদ পূরণের আশ্বাস দিয়েছে তারা। সবাই মিলে সহযোগিতা করলে শিগগিরই এ জেলার স্বাস্থ্যসেবায় পরিবর্তন আসবে।”
এদিকে, পঞ্চগড় জেলার পাঁচটি হাসপাতালে দীর্ঘদিন ধরেই চিকিৎসক সংকট চলছে। বর্তমানে জেলায় মোট ১১৪টি চিকিৎসক পদ শূন্য—যার মধ্যে সদর হাসপাতালে ২১টি, তেঁতুলিয়ায় ২০টি, আটোয়ারীতে ২১টি, বোদায় ২০টি, দেবীগঞ্জে ২৪টি এবং সিভিল সার্জন কার্যালয়ে ২টি পদ ফাঁকা রয়েছে।













Leave a Reply