অনলাইন ডেস্ক :
ট্রাম্প তার সবচেয়ে ‘খারাপ দুঃস্বপ্ন’ জোহরান মামদানির সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছেন। ডেমোক্র্যাট জোহরান মামদানি নিজেকে ‘ট্রাম্পের সবচেয়ে খারাপ দুঃস্বপ্ন’ হিসেবে অভিহিত করেছিলেন। চলতি মাসের মেয়র নির্বাচনে জয়ী ডেমো সমাজতান্ত্রিক দলের সঙ্গে রিপাবলিকান নেতা ট্রাম্পের এটাই হতে যাচ্ছে প্রথম সাক্ষাৎ।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি শুক্রবার হোয়াইট হাউসে নিউ ইয়র্ক সিটির নির্বাচিত মেয়র জোহরান মামদানির সঙ্গে দেখা করবেন।
ট্রাম্প বুধবার সোশ্যাল মিডিয়ায় বলেছেন, ‘আমরা একমত হয়েছি যে, এই বৈঠকটি ২১ নভেম্বর শুক্রবার ওভাল অফিসে অনুষ্ঠিত হবে।’
মামদানি এই সপ্তাহের শুরুতে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, তার দল একটি বৈঠকের ব্যবস্থা করার জন্য হোয়াইট হাউসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। মামদানির একজন মুখপাত্র বুধবার বলেছেন, ‘নির্বাচিত মেয়র ওয়াশিংটনে ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করার পরিকল্পনা করেছেন। সেখানে জননিরাপত্তা, অর্থনৈতিক নিরাপত্তা এবং সাশ্রয়ী মূল্যের এজেন্ডা নিয়ে আলোচনা করা হবে।
মামদানি এবং ট্রাম্প একে অপরের সমালোচনা করে আসছেন সেই শুরু থেকেই। ট্রাম্প মামদানির প্রতিপক্ষ অ্যান্ড্রু কুওমোকে সমর্থন করেছেন। মেয়র নির্বাচনের প্রচারণার সময় ট্রাম্প হুমকি দিয়েছিলেন, মামদানি জিতলে শহর থেকে কোটি কোটি ডলার ফেডারেল তহবিল আটকে দেওয়া হবে।
নিউ ইয়র্ক স্টেট কম্পট্রোলারের একটি প্রতিবেদন অনুসারে, মার্কিন ফেডারেল সরকার ২০২৬ অর্থবছরে নিউ ইয়র্ক সিটিকে ৭.৪ বিলিয়ন ডলার বা শহরের মোট ব্যয়ের প্রায় ৬.৪ শতাংশ প্রদান করে।
ট্রাম্প মামদানির চেহারা নিয়েও কটাক্ষ করেছিলেন।
নিউইয়র্কের মতো গুরুত্বপূর্ণ শহরে আফ্রিকা থেকে উঠে আসা ৩৩ বছর বয়সী এক মুসলিম তরুণ মেয়র হয়ে যাবেন, বিষয়টি ভাবতে পারেননি ট্রাম্প। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ একাধিক পোস্টে মামদানির চেহারা, কণ্ঠস্বর ও বুদ্ধিমত্তা নিয়ে কটাক্ষ করেছিলেন এবং তাকে ‘শতভাগ কমিউনিস্ট উন্মাদ’ বলে অভিহিত করেন।
ট্রাম্প লিখেছিলেন, ‘জোহরান মামদানি, একজন শতভাগ কমিউনিস্ট পাগল, ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রাইমারি জিতে এখন মেয়র হওয়ার পথে। আগেও কিছু উগ্র বামপন্থী দেখেছি, কিন্তু এবার ব্যাপারটা খুবই হাস্যকর হয়ে গেছে।
তার চেহারা বিশ্রী, কণ্ঠস্বর বিরক্তিকর, বুদ্ধিও কম।’
মামদানির উত্থানের পর থেকে ট্রাম্প তাকে ভুলভাবে ‘কমিউনিস্ট’ হিসেবে অভিহিত করে যাচ্ছে। নির্বাচনের প্রাক্কালে ট্রাম্প বলেছিলেন, মামদানি শহরে ‘বিপর্যয়’ ডেকে আনবেন।
এদিকে মামদানি ট্রাম্প প্রশাসনের নীতির সমালোচনা করেছেন। যার মধ্যে অভিবাসন বিরোধী কঠোর ব্যবস্থা এবং গাজা যুদ্ধের সময় ইসরায়েলের প্রতি মার্কিন সমর্থন নিয়েও কথা বলেছেন। মামদানি বামপন্থী নীতি এবং সাশ্রয়ী মূল্যের আবাসনের মতো বিষয়গুলোতে প্রচারণা চালিয়েছেন।
বিশাল নিউইয়র্ক নগরীর বাসিন্দাদের জন্য জোহরান মামদানি যে প্রতিশ্রুতি নিয়ে আসেন তা ছিল—‘এই শহর ধনী-গরিব সবার জন্য বাসযোগ্য করতে চাই’। শুধু তাই নয়, তিনি সরকারি বাসা ভাড়া না বাড়ানোর পাশাপাশি সবার জন্য বিনা খরচে বাসে চলাচলের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এ ছাড়াও আছে শিশুদের জন্য বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা।
মামদানি নিউইয়র্ক সিটির ইতিহাসে প্রথম মুসলিম ও প্রথম দক্ষিণ এশীয় মেয়র। পাশাপাশি গত এক শতাব্দীর মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ ব্যক্তি, যিনি নিউইয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি ১ জানুয়ারি মেয়র হিসেবে শপথ নেবেন।
প্রগতিশীল ডেমোক্র্যাট এবং প্রবাসী পটভূমি থেকে উঠে আসা জোহরান মামদানি দলের মনোনয়ন পান এবং দ্রুতই মেয়র পদের জন্য শীর্ষ পছন্দে পরিণত হন। এরপর কুওমো স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সিদ্ধান্ত নেন। ঠিক এক বছর আগে মার্কিন রাজনীতিতে জোহরান মামদানির কথা প্রায় কেউই জানতেন না। কিন্তু এক বছর পর তিনি শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই নন আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও বেশ আলোচিত।
সূত্র : বিবিসি













Leave a Reply