অনলাইন ডেক্স :
গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থা জানিয়েছে, ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের কেন্দ্রস্থলে একটি বিতরণ স্থানের কাছে ইসরায়েলি বাহিনী ত্রাণের অপেক্ষায় থাকা ২১ জনকে হত্যা করেছে, যা ত্রাণপ্রার্থীদের লক্ষ্য করে সর্বশেষ মারাত্মক ঘটনা।
বেসামরিক প্রতিরক্ষা মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল এএফপিকে জানিয়েছেন, মঙ্গলবার ভোরে গাজা উপত্যকার মধ্যাঞ্চলে ত্রাণের অপেক্ষায় থাকা ফিলিস্তিনিদের ওপরে হামলা চালায়। গুলি ও ট্যাংকের গোলা দিয়ে ইসরায়েলি দখলদার বাহিনী ২১ জনকে হত্যা এবং প্রায় ১৫০ জনকে আহত করেছে। মন্তব্যের জন্য এএফপি ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর সাথে যোগাযোগ করেছে।
দীর্ঘ এক বছর আট মাসেরও বেশি সময় ধরে ইসরায়েলের লাগাতার ও ভয়াবহ হামলায় গাজা উপত্যকা আজ প্রায় সম্পূর্ণ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। অবরুদ্ধ এই ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে এখন পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন ৫৫ হাজারের বেশি মানুষ। শিশুদের দেহ খণ্ডবিখণ্ড হয়ে গেছে বোমার আঘাতে, একাধিক পরিবারের সদস্যরা একসাথে মাটিচাপা পড়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। হাসপাতাল, আশ্রয়কেন্দ্র, স্কুল—কোনো কিছুই রেহাই পায়নি।
হামলার শুরু থেকেই ইসরায়েল গাজায় খাবার, পানি ও জ্বালানি সরবরাহে বাধা সৃষ্টি করে। উদ্দেশ্যমূলকভাবে মানবিক সহায়তার প্রবেশ বন্ধ করে দেওয়া হয়। ধ্বংস করে দেওয়া হয় কৃষিজমি। গাজার সাধারণ মানুষকে জীবনধারণের জন্য অত্যাবশ্যক সব উপকরণ থেকে বঞ্চিত করে সৃষ্টি করা হয় দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি।
২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) এক প্রতিবেদনে জানায়, দখলদার ইসরায়েল গাজায় বেসামরিক মানুষদেরকে অনাহারে ফেলে রাখাকে যুদ্ধের কৌশল হিসেবে ব্যবহার করছে। বিশেষ করে ত্রাণের আশায় জড়ো হওয়া দুর্বল ও ক্ষুধার্ত মানুষদের লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয় বারবার।
দুই মাসের যুদ্ধবিরতির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই, গত ২ মার্চ থেকে ইসরায়েল গাজায় সবধরনের ত্রাণ প্রবেশ সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেয়। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে প্রায় তিন মাস পর, মে মাসের শেষ দিকে সীমিত আকারে কিছু ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দেয় ইসরায়েল। তবে জাতিসংঘ বা আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থাগুলোর মাধ্যমে নয়— যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়নে তৈরি করা হয় গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) নামের একটি নতুন সংগঠন, যার মাধ্যমেই অল্প কিছু জায়গায় ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে।
জিএইচএফ-এর এসব বিতরণকেন্দ্রেই এখন প্রায় প্রতিদিনই ত্রাণ নিতে আসা ফিলিস্তিনিদের ওপর গুলি চালাচ্ছে ইসরায়েলি সেনারা। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো থেকে জানা গেছে, গাজার এসব বিতরণকেন্দ্রে ক্ষুধার্ত হাজার হাজার মানুষ ত্রাণের আশায় জড়ো হন, কিন্তু সেখানে সরাসরি ইসরায়েলি বাহিনীর গুলি বর্ষণে মৃত্যু হয় বহু ফিলিস্তিনির।
গাজার গণমাধ্যম কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, মে মাসের শেষ দিক থেকে এখন পর্যন্ত শুধু জিএইচএফ-এর ত্রাণকেন্দ্রগুলোতেই ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন চার শতাধিক ফিলিস্তিনি, আহত হয়েছেন প্রায় ৩ হাজার ৫০০ জন।এই বর্বরতা বিশ্বজুড়ে তীব্র নিন্দা কুড়ালেও, নেই কোনো কার্যকর পদক্ষেপ।













Leave a Reply