পাঁচ বছরে রমেক হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে মৃত্যু হয়েছে ১২০ জন রোগী, চিকিৎসা নিয়েছেন ২ হাজার ৮ শত ৮৮ জন

নিজস্ব প্রতিবেদক:
রংপুর বিভাগের আট জেলায় শীতের প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় আগুনে পোড়া রোগীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০২০ সাল থেকে শুরু করে চলতি বছরের (২০২৪) সালের ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত রংপুর মেডিকেল কলেজের বার্ণ ইউনিটে ২ হাজার ৮ শত ৮৮ জন আগুনে পোড়া রোগী ভর্তি হয়েছে। এদের মধ্যে মারা গেছে ১২০ জন। তবে পোড়া রোগীদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যাই সবচাইতে বেশি। সচেনতার অভাবে এসব দূর্ঘটনা ঘটছে বলে জানান চিকিৎসকেরা।
হাসপাতাল সূত্রে জনা গেছে, বার্ণ ইউনিটে যেসকল পোড়া রোগী ভর্তি হয়ে থাকেন তাদের বেশিরভাগ আগুন, গরম পানি, গরম ছাই, বৈদ্যুতিক আগুন ও ক্যামিকেলে পোড়া। আগুনে পোড়া যেসব রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়ে থাকেন তাদের বেশিরভাগের বাড়ি পঞ্চগড়,ঠাকুরগাঁ, দিনাজপুর ও নীলফামারী জেলায়। এছাড়াও, লালমনিহাট, কুড়িগ্রাম গাইবান্ধা ও রংপুরেরও কিছু রোগী আছেন।
২০২০ সালে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে ৬৩০ পোড়া রোগী ভর্তি হয়েছে। এদের মধ্যে মধ্যে শিশুর সংখ্যা ২১৪ জন। ভর্তিকৃত রোগীদের মধ্যে আগুনে পোড়া ৩৭০ জন, গরম পানিতে ঝলসানো ১৮৮ জন, গরম ছাইয়ে পোড়া ১৮ জন ও বৈদ্যুতিক আগুনে ৫৪ জন। এসময় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে ১৮ জন।
২০২১ সালে ভর্তি হয়েছেন মোট ৫৪৮ জন পোড়া রোগী। এদের মধ্যে আগুনে পোড়া ১৭৮ জন, গরম পানিতে ২৫৫ জন, ছাইয়ের আগুনে ২৫ জন ও বৈদ্যুতিক আগুনে ৭০ জন। পোড়া রোগীদের মধ্যে শিশু রয়েছে ১৭২ জন। এসময় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে ২২ জন।
২০২২ সালে ভর্তি হয়েছেন মোট ৬০৮ জন পোড়া রোগী। এদের মধ্যে আগুনে পোড়া ২৮৮ জন, গরম পানিতে ২১২ জন, ছাইয়ের আগুনে ৮ জন ও বৈদ্যুতিক আগুনে ৭৬ জন। পোড়া রোগীদের মধ্যে শিশু রয়েছে ১০৪ জন। এসময় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে ৩০ জন।
২০২৩ সালে ভর্তি হয়েছেন মোট ৫৮০ জন পোড়া রোগী। এদের মধ্যে আগুনে পোড়া ২৯০ জন, গরম পানিতে ২৫৫ জন, ছাইয়ের আগুনে ১০ জন ও বৈদ্যুতিক আগুনে ৬৮ জন। পোড়া রোগীদের মধ্যে শিশু রয়েছে ১১৫ জন। এসময় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে ৩৫ জন।
২০২৪ সালে ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত রংপুর মেডিকেল কলেজের বার্ণ ইউনিটে ভর্তি হয়েছেন মোট ৫২২ জন পোড়া রোগী। এদের মধ্যে আগুনে পোড়া ১৭৬ জন, গরম পানিতে ২৩৬ জন, ছাইয়ের আগুনে ২৮ জন ও বৈদ্যুতিক আগুনে ৬৪ জন। পোড়া রোগীদের মধ্যে শিশু রয়েছে ১৭০ জন। এসময় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে ২ জন। পোড়া রোগীদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যাই সবচাইতে বেশি।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ও প্লাস্টিক সার্জারী বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডাঃ এম এ হামিদ পলাশ জানান, হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে যেসব পোড়া রোগী ভর্তি হয়ে থাকেন তাদের বেশিরভাগেই নারী ও শিশু। কেউ আগুনে অথবা গরম ছাইয়ে পুড়ে, কেউ গরম পানিতে ঝলসে আর কেউ কেউ আসেন বৈদ্যুতিক আগুনে ঝলসে।
তিনি বলেন, রোগীদের বেশির ভাগ ভর্তি হন গ্রাম এলাকার। শীতের সময় গ্রামের অনেক এলাকায় নারী, পুরুষ ও শিশুরা একত্রে মিলে গোল হয়ে বসে আগুন তাপান। এতে করে দুর্ঘটনা বেশি ঘটে থাকে। সবাইকে সচেতন হতে হবে। সিনথেটিক কাপড় পড়ে আগুনের কাছে যাওয়া যাবে না। আগুন পোহানোর পরিবর্তে গরম পোষাক পরিধানের জন্য পরামর্শ দেন এই চিকিৎসক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *