চীনে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ, বাধা খাদ্য ও ভাষা 

অনলাইন ডেস্ক

যশোরের ওমর ফারুক রাশেদীর ছোট ভাই মেরুদণ্ডের রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। দেশে যথাযথ চিকিৎসা হচ্ছিল না। ফারুক ঢাকার একটি সার্ভিস সেন্টারের মাধ্যমে খবর পান, চীনের কুনমিং টোংরেন হাসপাতালে এর ভালো চিকিৎসা আছে। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দেয়।

হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর ফারুকের ভাইয়ের অস্ত্রোপচার হয় এবং সুস্থ হন। চিকিৎসা শেষ হতে সময় লেগেছে প্রায় ১০ দিন। খরচ ঢাকার উন্নত বেসরকারি হাসপাতালের তুলনায় তাঁর কাছে কমই মনে হয়েছে।

চিকিৎসাসেবা ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের আন্তরিকতায় সন্তুষ্ট হলেও ভাষাগত সমস্যাকে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখেছেন ওমর ফারুক। তিনি বলছিলেন, ‘দোভাষী সহজে পাওয়া যায় না, আর পেলেও খরচ বেশি।’

কুনমিং মেডিকেল ইউনিভার্সিটির ফার্স্ট অ্যাফিলিয়েটেড হাসপাতালে তোলা।
প্রথমবার চীনা মুদ্রায় ৫০০ ইউয়ান (বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৯ হাজার) দিতে হয়, পরে সময় অনুযায়ী ২০০ থেকে ৩০০ ইউয়ান দিতে হয়। এই খরচ নিজেকেই বহন করতে হয়। বাংলাদেশিদের জন্য উপযুক্ত খাবারেরও সীমাবদ্ধতা আছে। আবার দামও বেশি। ৮ আগস্ট ইউনান প্রদেশের রাজধানী কুনমিংয়ে টোংরেন হাসপাতালে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। ওমর ফারুকের পরামর্শ, চীনে পড়তে আসা বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের দোভাষী হিসেবে কাজে লাগানো যেতে পারে।

শুধু কুনমিং টোংরেন নয়, চীনের অনেক হাসপাতালেই আধুনিক চিকিৎসাসুবিধা ও মানসম্পন্ন সেবা রয়েছে। তবে ভাষা ও খাবারের সমস্যায় বাংলাদেশি রোগীরা সমস্যায় পড়েন। অবশ্য হাসপাতালগুলো এ সমস্যার সমাধানে উদ্যোগ নিয়েছে, বাংলাদেশি রোগীদের কথা মাথায় রেখে খাবারের রেস্তোরাঁ ও দোভাষী সেবা বাড়ানোর পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে। ইতিমধ্যে কিছু ব্যবস্থাও করা হয়েছে।

দোভাষী সহজে পাওয়া যায় না, আর পেলেও খরচ বেশি
ওমর ফারুক, রোগী
চীন-বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে চীন সরকারের আমন্ত্রণে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া সাংবাদিকদের একটি প্রতিনিধিদল ৭ ও ৮ আগস্ট চীনের কুনমিংয়ের বিভিন্ন হাসপাতাল ঘুরে দেখেন।

কুনমিং টোংরেন হাসপাতালে নানা ধরনের চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়। হাসপাতালের ভাইস প্রেসিডেন্ট শেন লিং জানান, হাসপাতালে ১০০-এর বেশি চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ আছেন এবং ৩৭টি ক্লিনিক্যাল বিভাগ চালু রয়েছে। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক মানের ডায়াগনস্টিক ও ল্যাবরেটরি সরঞ্জাম রয়েছে।

৮ আগস্ট সাংবাদিকেরা কুনমিং আই হাসপাতাল পরিদর্শন করেন। হাসপাতালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জেং মিন জানান, তাঁরা বেসরকারি হাসপাতাল হলেও চিকিৎসাসেবা সরকারি হাসপাতালের সমতুল্য। বিদেশি রোগীদের চিকিৎসায় অভিজ্ঞ চিকিৎসকেরা। ভাষাগত সমস্যা নিয়ে বাংলাদেশি রোগীদের চিন্তার কিছু নেই।

চট্টগ্রামের তরুণ সাগর হোসেন বললেন, ক্যানসারে আক্রান্ত মাকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে এসেছিলেন। খরচ তুলনামূলক একটু বেশি হলেও তাঁর চিকিৎসার মান অনেক ভালো। তবে ভাষাগত সমস্যা আছে। তাঁর একজন চীনা বন্ধু থাকায় যথেষ্ট সহায়তা পেয়েছেন।
সাংবাদিকেরা ৭ আগস্ট কুনমিং মেডিকেল ইউনিভার্সিটির ফার্স্ট অ্যাফিলিয়েটেড হাসপাতাল পরিদর্শন করেন। সরকারি এই হাসপাতালে সাধারণত সব রোগের উন্নত চিকিৎসা পাওয়া যায়। পরিবেশও উন্নত। এ সময় প্রাদেশিক স্বাস্থ্য কমিশন ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরে।

সেখানে পিএইচডি করছেন বাংলাদেশি চিকিৎসক আরিফিন ইসলাম। তিনি জানান, আন্তর্জাতিক বিভাগের সবাই ইংরেজি জানেন, আর বাংলাদেশি রোগীরা চাইলে স্থানীয় বাংলাদেশি শিক্ষার্থী বা দোভাষীর সহায়তার ব্যবস্থা করা হয়। থাকারও সমস্যা নেই, ভর্তি রোগীরা হাসপাতালে থাকেন, আর বহির্বিভাগের রোগীরা কাছাকাছি হোটেলে থাকতে পারেন। কুনমিংয়ে মুসলিম খাবারের রেস্তোরাঁও আছে; এমনকি হাসপাতালের ভেতরেই মুসলিমদের জন্য খাবার হোটেল আছে। এ ছাড়া বাংলাদেশি, ভারতীয় ও পাকিস্তানি কিছু রেস্তোরাঁ রয়েছে। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে খাবার নেওয়া যায়। চিকিৎসা খরচ থাইল্যান্ডের তুলনায় কম বলে জানান তিনি।

ভাষাগত সমস্যাটি যে চীনে চিকিৎসার ক্ষেত্রে বড় সমস্যা, সেটি বোঝা গেল ৯ আগস্ট দেশে ফেরার সময় কুনমিং বিমানবন্দরে এক তরুণের কথায়। চট্টগ্রামের তরুণ সাগর হোসেন বললেন, ক্যানসারে আক্রান্ত মাকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে এসেছিলেন। খরচ তুলনামূলক একটু বেশি হলেও তাঁর চিকিৎসার মান অনেক ভালো। তবে ভাষাগত সমস্যা আছে। তাঁর একজন চীনা বন্ধু থাকায় যথেষ্ট সহায়তা পেয়েছেন। একটি সমস্যা হলো, রিপোর্টগুলো ইংরেজিতে দিতে পারে না। এটা বড় সমস্যা। পরবর্তী সময়ে দেশে গেলে চিকিৎসকেরাও তা পড়তে পারবেন না।

৮ আগস্ট কুনমিংয়ের স্থানীয় একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলন করে চীনে বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য চিকিৎসাসংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন প্রধান উপদেষ্টার উপ–প্রেস সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মজুমদার ও কুনমিংয়ে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল মোহাম্মদ খালেদ।

আজাদ মজুমদার বলেন, প্রাথমিকভাবে চীন সরকার কুনমিংয়ের তিনটি প্রধান হাসপাতাল ও পরে আরেকটি বিশেষায়িত হাসপাতাল বাংলাদেশিদের জন্য উন্মুক্ত করে। গত মে মাসে চীন সরকার তাদের সব সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল বাংলাদেশিদের জন্য উন্মুক্ত ঘোষণা করে। আজাদ মজুমদার বলেন, কুনমিং ও চট্টগ্রামের মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট এবং ঢাকা-কুনমিং রুটে একাধিক ফ্লাইট চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *