কষ্টের দিন প্যাডেলরিকশার, ব্যাটারিরিকশা কাড়ছে রোজগার

অনলাইন ডেস্ক

রোদে ভিজে, ঘাম ঝরিয়ে প্যাডেল ঘোরান তাঁরা। বরিশাল শহরের অলিগলি থেকে সদর রোড-প্রতিটি মোড়ে ছুটে যান যাত্রী নিয়ে। কিন্তু সেই ঘাম আর আয়ের পথ এখন হুমকিতে। কারণ ব্যাটারিচালিত রিকশার দাপটে বেকার হয়ে পড়ছেন জেলার হাজারো প্যাডেল রিকশাশ্রমিক।

রবিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১টার দিকে বরিশাল নগরীর অশ্বিনী কুমার টাউন হলের সামনে মানববন্ধনের আয়োজন করা হয় প্যাডেল রিকশাশ্রমিক সংগঠনের উদ্যোগে। হলের সামনে সারিবদ্ধ রিকশা রেখে চালকরা ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন করেন। এতে জীবিকার অধিকার রক্ষার দাবি তোলেন রিকশাশ্রমিকরা।

রিকশাশ্রমিকরা বলেন, সদর রোড, লাইন রোড, কাকলির বাড়ি রোড, চকবাজার রোড ও চকরাবাদ রোডসহ নগরীর প্রধান সড়কজুড়ে এখন ব্যাটারিচালিত রিকশার দখল। এতে শুধু আয় কমছে না, নগরে যানজট ও দুর্ঘটনার ঝুঁকিও বাড়ছে।
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া রিকশাচালক মফিজুল হক জানান তাঁর কষ্টের কথা। বলেন, ‘ভোরে ঘুম ভাঙে মসজিদের আজানে। খালি পেটে বের হয়ে সারাদিন প্যাডেল ঘুরাই।
আগে দিনে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা রোজগার হতো। এখন ২০০ টাকাও হয় না। এই টাকায় ঘরে স্ত্রী, দুই মেয়ে, এক ছেলের খরচ চলবে কিভাবে? ছোট মেয়ে স্কুলে যায়, বেতন বাকি পড়ে আছে।’
একই কণ্ঠে যুক্ত হন শ্রমিক নুরুল। তাঁর কথায়, ‘পেটে ভাত নেই, ঘরে বাজার নেই।
তবু প্যাডেল চালাই। কারণ এটাই আমাদের একমাত্র সম্বল। কিন্তু এখন ব্যাটারিরিকশা সব যাত্রী কেড়ে নিচ্ছে। আমরা যাত্রী পাচ্ছি না। জীবন ঝুঁকিতে ফেলে যাত্রীরা ছুটছেন ব্যাটারি রিকশায়।’
প্যাডেল রিকশাশ্রমিক সংগঠনের নেতা আব্দুল খালেকের অভিযোগ, আইন করে ব্যাটারি রিকশা নিষিদ্ধ করা হলেও প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় এগুলো শহরের সড়কে চলছে। আমরা দিনে দিনে বেকার হচ্ছি। আমাদের বাচ্চাদের মুখে ভাত তুলব কীভাবে?’
রিকশাচালক মজিবর বলেন, ‘আমরা আধুনিকতার বিরুদ্ধে নই। কিন্তু আমাদের না খেয়ে মরতে দিলে কিভাবে হবে? বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ না দেওয়া পর্যন্ত ব্যাটারিরিকশা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।’
মানববন্ধন শেষে রিকশাশ্রমিকরা বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রশাসকের কাছে একটি স্মারকলিপি দেন। সেখানে উল্লেখ করা হয়, দীর্ঘদিন ধরে আবেদন জানানো হলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। শ্রমিক নেতারা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, দ্রুত দাবি না মানা হলে আরো বৃহত্তর আন্দোলনে নামবেন তাঁরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *