কখনো ভাবিনি এত কিছু করতে পারব

অনলাইন ডেস্ক

খুলনার মফস্বল থেকে ঢাকায় আসা, সাহস করে ব্যান্ড গড়ে তোলা, সেই ব্যান্ড নিয়ে পৌঁছে গেলেন দেশ-বিদেশের মঞ্চে। ‘চিরকুট’-প্রধান শারমিন সুলতানা সুমির পথচলা কেবল নারীদের জন্যই নয়, যে কারোর জন্যই হতে পারে প্রেরণার। গতকাল ছিল এ সংগীতশিল্পীর জন্মদিন। বিশেষ দিনে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন কামরুল ইসলাম।

জন্মদিনের শুভেচ্ছা

থ্যাংক ইউ সো মাচ

কেমন কাটছে দিনটি?

ঠিকঠাক আছি, বেঁচে আছি, এটাই তো বড় ব্যাপার। ভালোবাসার চেয়ে সুন্দর কিছু তো নেই। সেই ভালোবাসাই পাচ্ছি। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ ফোন করছে, শুভেচ্ছা জানাচ্ছে।

ব্যান্ডের সতীর্থরাও এসেছিল। বেশ কাটছে। তবে জন্মদিন এলে আব্বা-আম্মাকে খুব মিস করি, তাঁরা তো নেই পৃথিবীতে। জন্মদিনে তাঁদের অভাবটা বেশি টের পাই।
বয়স নিয়ে লুকোছাপা করেন?

বয়স ব্যাপারটা আমার কাছে অদ্ভুত। মাঝেমধ্যে মনে হয়, আমার বয়স তিন-চার হাজার বছর! আবার কখনো মনে হয় এখনো জন্মই হয়নি। তো বয়সের সংখ্যা প্রকাশ কিংবা লুকোনো নিয়ে আমার খুব একটা মাথাব্যথা নেই। আমার বয়স ৪৫। দেখুন, পৃথিবীতে কেউ আগে এসেছে, কেউ পরে।

জীবনটাকে অর্থবহ করে তোলাই আসল।

সংগীতে কত বছর হলো? ‘চিরকুট’ তো ২০০২-এ গঠন করলেন। তার আগে সংগীতের সঙ্গে কিভাবে যুক্ত হওয়া?

একদম ছোটবেলায়। যতদূর মনে পড়ে, ১৯৯০ কিংবা ৯১-তে নতুন কুঁড়িতে অংশ নিয়েছিলাম। সে সময় প্রথমবার বুঝতে পেরেছিলাম, আমি গাইতে পারি। পরে মা-বাবাও সাহস দিলেন, উৎসাহ দিলেন। তবে গান লেখা, সুর করা এসব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পর শুরু। ব্যান্ড করার ভাবনা থেকেই গান তৈরির সূচনা।

ব্যান্ড করার ইচ্ছাটা হয়েছিল কেন?

আমি বরাবরই চেয়েছি, পরিবারের মতো করে গান করতে। আর ব্যান্ড তো পরিবারের মতোই। সে জন্যই ব্যান্ড করা। তা ছাড়া শুরু থেকেই ইচ্ছা ছিল, নিজেদের মতো করে গান করার।

গান নিয়ে দেশের আনাচে-কানাচে তো বটে, বিশ্বের বড় বড় আয়োজনেও উপস্থিত হয়েছেন…

কখনো ভাবিনি এত কিছু করতে পারব। আমি নিজে কিছু হতে চাইনি, সব সময় ‘চিরকুট’ নিয়েই এগোতে চেষ্টা করেছি। জাস্ট ধ্যান দিয়ে গান করেছি। অত ভেবে তো আসলে গান করিনি। কে কী ভাবল, কে পছন্দ করল, কে করল না, এসব চিন্তা করিনি। যেটা করতে চেয়েছিলাম, সেটাই করেছি। চেষ্টা করেছি সবাইকে নিয়ে পথচলার, সবাইকে ভালোবাসার।

দেশের ব্যান্ড মিউজিকে নারীদের অবস্থান এখনো সেভাবে উল্লেখযোগ্য না। কারণ কী? দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় আপনি কী প্রতিবন্ধকতা দেখলেন?

প্রথম কথা, আমি মানুষ হিসেবে ব্যান্ড করেছি, নারী হিসেবে না। এর শিক্ষাটা পেয়েছি পরিবারে। বাবা-মা আমাকে শিখিয়েছেন, ছেলেমেয়ে নয়; বরং একজন মানুষ হিসেবে বড় হতে হবে। সমাজের যে বাধা, সেটা সবার জন্যই। তবে নারীদের ক্ষেত্রে হয়তো কিছুটা বেশি। ধরুন কোনো কিছু ছেলেরা বললে এক বারে হয়ে যায়, মেয়েদের ক্ষেত্রে ১০ বার বলতে হয়। এসব নিয়ে একটা ক্লান্তি, হতাশা তো আসেই। তবে ধৈর্যটা রাখতে হবে, লেগে থাকতে হবে। কেউ এসে আপনাকে কিছু করে দেবে না, নিজেরটা নিজেকেই অর্জন করে নিতে হয়। আমি মফস্বল থেকে আসা মেয়ে, এ রকম মেয়েদের কনফিডেন্স শূন্যের কোঠায়। তবু নিজের চেষ্টায় এতদূর আসা। আমি খুলনা থেকে ঢাকায় আসব, এটুকুও তো ভাবিনি। আসলে কিছু জিনিস সৃষ্টিকর্তা নিজ হাতে দেন। আমাদের কাজ হলো, ধৈর্য ধরে চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া। আমি আরো অনেক কাজ পারি, নৃত্য, আলপনা, মেকওভার; কিন্তু সবকিছু করতে চাইনি। গানটাকেই ধ্যানজ্ঞান বানিয়ে নিয়েছি।

জীবন কেমন? গানে যেমন বলেছেন, ‘জলে ভাসা পদ্মের’ মতো?

অবশ্যই। জীবন এক বিস্ময়কর ভ্রমণ। এটা স্রষ্টার দেওয়া একটি সুযোগ। সীমাহীন ভালোবাসার সুযোগ। চড়াই-উতরাই পার করে বেঁচে থাকার সুযোগ। দমবন্ধ ঘরেও খোলা আকাশ হওয়ার সুযোগ। সহজে-সুন্দরে প্রিয়জনের পাশে থাকার সুযোগ, পাশাপাশি হাঁটার সুযোগ। এটাকে আমরা কিভাবে খরচ করছি, সেটা আমাদের বিবেক ও বিবেচনার বিষয়।

যে ভাবনা থেকে ব্যান্ড শুরু করেছিলেন, তার কতখানি প্রতিফলিত হলো, সেই হিসাবটা মেলান?

হ্যাঁ। সারা জীবন ব্যান্ডই করেছি। সবাই কিন্তু ‘চিরকুট’কে ব্যান্ড হিসেবেই চেনে; আমার নামে না; বরং আমিই চিরকুটের সুমি হিসেবে পরিচিত। চিরকুট আমার জার্নি, এটাকে বাদ দিয়ে নিজে জনপ্রিয় হবো, তা কখনোই ভাবিনি। এই যে মানুষ আমাকে, আমাদের ভালোবাসে, এত দিন গানের সঙ্গে লেগে থাকতে পারলাম, এগুলো তো বিরাট প্রাপ্তি। এ জন্য আমিই চিরকুটের প্রতি কৃতজ্ঞ। যারা ছিল কিংবা এখন যারা আছে, সবাই এ জার্নির অংশ।

কনসার্টের ব্যস্ততা কেমন?
ইদানীং তো কনসার্ট কমই হচ্ছে। তার মধ্যে আমরা আরো বেছে বেছে শো করি। সর্বশেষ আগস্টে ম্যানচেস্টারে শো করে এসেছি। আগামী মাসে খুলনা, নাটোর বিভিন্ন জেলায় কয়েকটা শো আছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *