অনলাইন ডেস্ক
ধূমপানের আসক্তি ছেড়ে দেওয়া নিঃসন্দেহে একটি কঠিন কাজ। বিশেষ করে দীর্ঘদিন ধরে যারা ধূমপান করছেন, তারা সেটি ভালোভাবে জানেন। মানসিক চাপ কাটাতে অনেকেই ধূমপানের ওপর কিছুটা ভরসা করেন, কিন্তু তার সঙ্গে পদে পদে লেগে রয়েছে ক্যান্সারের মতো মারণব্যাধির ভয়। তাই অনেকে এই আসক্তি থেকে বের হয়ে আসার চেষ্টা করেন।
তবে প্রশ্ন হচ্ছে, ধূমপান ছাড়লেই কি ফুসফুসের ক্যান্সারের ঝুঁকি সম্পূর্ণ কেটে যায়? এবার সেই তথ্য জানাচ্ছেন দিল্লির সার্জিক্যাল অনকোলজির ডিরেক্টর মনদীপ সিং মালহোত্রা।
এক সাক্ষাৎকারে এই চিকিৎসক জানিয়েছেন, শুধু সিগারেট ছাড়া মানেই যাত্রা শেষ নয়। তামাকের ক্ষতিকর প্রভাব শরীরে বহু বছর ধরে থেকে যায়। তাই অতিরিক্ত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।
ডা. মালহোত্রা প্রাক্তন ধূমপায়ীদের জন্য ৫টি কার্যকর পরামর্শ দিয়েছেন, সেগুলো হচ্ছে—
সম্পূর্ণভাবে ধূমপান ত্যাগে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ
অনেকে ধূমপান ছাড়ার পর মাঝে মাঝে আবার একটি সিগারেট খেয়ে ফেলেন। কিন্তু এই ‘শুধু একবার’ মনোভাব আবার শরীরকে নিকোটিনের ওপর নির্ভরশীল করে তোলে এবং আগের সব সুপ্রভাব নষ্ট করে দেয়। তাই একেবারেই ধূমপান থেকে দূরে থাকতে হবে। পাশাপাশি যেখানে অন্যরা ধূমপান করছেন সেই পরিবেশও এড়িয়ে চলা জরুরি।
স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন
নিয়মিত ব্যায়াম, যোগব্যায়াম ও শ্বাস-প্রশ্বাসের অনুশীলন ফুসফুসের ক্ষমতা বাড়ায় এবং তাকে সুস্থ রাখে। এ ছাড়া সক্রিয় জীবনধারা শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে, যা তামাকের দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করে।
অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার
খাবার শরীরের ওপর ধূমপানের ক্ষতিকর প্রভাব কাটিয়ে উঠতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় শাক-সবজি, মৌসুমি ফল, বাদাম ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ খাবার রাখতে পারলে শরীরের ফ্রি র্যাডিক্যালস নিষ্ক্রিয় হয় এবং ফুসফুসের প্রদাহ কমে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এগুলো ধূমপানের কারণে হওয়া অক্সিডেটিভ ড্যামেজ আংশিকভাবে কমাতে সাহায্য করে।
নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা
ফুসফুসের ক্যান্সার প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে চিকিৎসার ফলাফল অনেক ভালো জায়গায় আসার সুযোগ থাকে। তাই প্রাক্তন ধূমপায়ীদের জন্য প্রতি বছর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শে ইমেজিং টেস্ট করানো উচিত।
যদিও লো-ডোজ সিটি স্ক্যান কিছু ক্ষেত্রে প্রাথমিক পর্যায়ে ফুসফুসের ক্যান্সার শনাক্ত করতে সাহায্য করছে, তবে এটি এখনো সাধারণ স্ক্রিনিং পদ্ধতি হিসেবে প্রচলিত নয়। তাই ব্যক্তিগত ঝুঁকির ওপর ভিত্তি করে চিকিৎসক-নির্দেশিত স্ক্রিনিং-ই সবচেয়ে নিরাপদ।
নতুন প্রজন্মের উন্নত স্ক্রিনিং পদ্ধতির সুবিধা
চিকিৎসা বিজ্ঞানের দ্রুত অগ্রগতির ফলে লিকুইড বায়োপসি এখন ভবিষ্যতের অন্যতম প্রতিশ্রুতিশীল পদ্ধতি হিসেবে উঠে আসছে। এই পরীক্ষার মাধ্যমে সাধারণ একটি রক্তের নমুনা থেকে ক্যান্সার-সম্পর্কিত জেনেটিক পরিবর্তন শনাক্ত করা সম্ভব।
দীর্ঘমেয়াদি ধূমপায়ী যারা ধূমপান ছেড়েছেন, তাদের জন্য এটি ভবিষ্যতে এক নিরাপদ ও নন-ইনভেসিভ উপায় হতে পারে, যা ফুসফুসের ক্যান্সার প্রাথমিক পর্যায়েই শনাক্ত করতে সক্ষম।
ডা. মালহোত্রার মতে, ধূমপান ছাড়ার পরও আত্মতুষ্টিতে ভেসে যাওয়া উচিত নয়। বরং সুস্থ জীবনযাপন, সঠিক খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও আধুনিক চিকিৎসা প্রযুক্তির সুবিধা গ্রহণই প্রাক্তন ধূমপায়ীদের জন্য ফুসফুস ক্যান্সারের ঝুঁকি কমানোর সবচেয়ে কার্যকর পথ।
















Leave a Reply