কালবৈশাখী ঝড়ের তাণ্ডবে লন্ডভন্ড রংপুর

অনলাইন ডেক্স

রংপুরে কালবৈশাখী ঝড়ে উড়ে গেছে কয়েকশ ঘরবাড়ি ও গাছপালা। জেলার তারাগঞ্জ, গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া, ও পীরগাছা উপজেলাসহ বিভিন্ন জায়গায় ঝোড়ো হাওয়ায় ঘরবাড়ির পাশাপাশি ফসলেরও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। শনিবার (২৬ এপ্রিল) রাত পৌনে ১১টার দিকে রংপুর মহানগরসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ঝড়ের তাণ্ডব চলে। কয়েক মিনিটের ঝোড়ো হাওয়া ও শিলাবৃষ্টিতে এই ক্ষতি হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঝোড়ো বাতাসে আম, লিচু, ভুট্টা, ধান, পাটসহ উঠতি ফসলের ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ের স্থায়িত্ব কম হলেও কোথাও কোথাও বাতাসের বেগে ঘরবাড়ি ও গাছ-গাছালির ক্ষতির পাশাপাশি উড়ে গেছে স্থাপনা।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, শনিবার রাত পৌনে ১১টার পর থেকে থেমে থেমে কালবৈশাখী ঝড় ও ঝোড়ো হাওয়া বইতে থাকে। এতে কয়েকটি উপজেলায় শতাধিকের বেশি ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। কৃষি বিভাগ ও আবহাওয়া অধিদপ্তর এখন পর্যন্ত ক্ষতির পরিমাণ জানাতে পারেনি।

জেলার তারাগঞ্জ উপজেলার ইকরচালি ইউনিয়নের হাজীপুর গ্রামের ওমর মিয়া জানান, তার বাড়িতে গাছ উপরে পড়ে দুটি পাকাঘর ভেঙে গেছে। পাশাপাশি তামাকসহ ফসলের ক্ষতি হয়েছে।

একই ইউনিয়নের আব্দুল জব্বার বলেন, ইকরচালি বাজার-সংলগ্ন বটের গাছ ঘরের ওপর উপরে পড়ে তিনটি পাকা ঘর ভেঙে গেছে। বাজারের অনেক দোকানের ক্ষতি হয়েছে। কোথাও কোথাও গাছপালা উপড়ে পড়ে রাস্তাঘাট বন্ধ হয়ে গেছে।

স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী বিপ্লব হোসেন অপু জানান, তারাগঞ্জ উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নে অন্তত দুই শতাধিক ঘরবাড়ির ক্ষতি হয়েছে। এই কালবৈশাখী রংপুর-সৈয়দপুর মহাসড়কের বিভিন্ন জায়গায় গাছপালা উপড়ে পড়ে যান চলাচল বন্ধ ছিল। রাতে তারাগঞ্জ হাইওয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থল থেকে গাছ সরিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করে। ফসলের ক্ষতির পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। সবমিলিয়ে ক্ষতির পরিবার আরও বেশি হতে পারে বলে জানান তিনি।

গঙ্গাচড়া উপজেলার বড়বিল ইউনিয়নের মন্থনা, বাগপুর, মনিরাম, কোলকোন্দ ইউনিয়নের গোডাউনের হাট, পীরের হাট, কুটিরপাড়, আলমবিদিতর ইউনিয়নের বড়াইবাড়ি, মণ্ডলেরহাট, শয়রাবাড়ি, নোহালি ইউনিয়নের নোহালিহাট, আনোরমারি, লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নসহ বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ।

রাত সাড়ে ১০টার দিকে হঠাৎ শুরু হয় কালবৈশাখী ঝড়। এতে গাছপালা উপড়ে পড়ে এবং বাড়িঘর ভেঙে যায়। কারো কারো ঘরের চাল উড়ে গেছে। ধসে পড়েছে বাড়ির দেয়ালও। ক্ষতি হয়েছে তামাক, ধান, লিচু, আম ও কলাগাছের।

এদিকে পীরগাছা উপজেলার তাম্বুলপুর, ছাওলা, অন্নদানগর, কান্দিসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের বেশ কিছু গ্রামে গাছপালা উপড়ে পড়ে বাড়িঘর ভেঙে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। কালবৈশাখী ঝড়ের তাণ্ডবে অনেক সড়কে বেশ কিছু গাছ ভেঙে পড়ায় যান চলাচল ব্যাহত হয়। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের পাশাপাশি স্থানীয় লোকজন গাছ সরিয়ে নিতে কাজ করেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তারাগঞ্জ, গঙ্গাচড়া ও কাউনিয়ার বিভিন্ন এলাকা থেকে ঝড়ে আহত শিশুসহ বেশ কয়েকজনকে স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ছাড়া ঝড়ের কারণে ভেঙে পড়েছে অনেকের মাথা গোঁজার ঠাঁই। গ্রামেগঞ্জে পল্লী বিদ্যুতের পাশাপাশি শহরের বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগের তার ছিঁড়ে পড়েছে।

ইকরচালি বাজার এলাকার বিজয় মন্ডল জানান, ঝড়ের স্থায়িত্ব ছিল ১০ থেকে ১৫ মিনিট। কিন্তু এই অল্প সময়ের মধ্যে ঝড়ে গ্রামের অনেক ঘরবাড়ি, গাছগাছালি ও উঠতি ফসলের ক্ষতি হয়েছে। কিছু কিছু জায়গায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

কাউনিয়া উপজেলার হারাগাছ পৌর এলাকার ডালিম মিয়া বলেন, রাতে যখন ঘুমানোর প্রস্তুতি চলছিল, তখন হঠাৎ ঝড়বৃষ্টি শুরু হয়। ঝড়ে বাতাসের খুব বেগ ছিল। আমার নিজের দুটি ঘরের টিনের চাল উড়ে গেছে। অনেক গাছগাছালি ভেঙে পড়েছে। আশপাশের ঘরবাড়িসহ গ্রামের অনেকের বাড়িঘর ভেঙে তছনছ হয়েছে।

গঙ্গাচড়া উপজেলার লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদী বলেন, রাতে কালবৈশাখী ঝড় থেমে যাওয়ার পর বিভিন্ন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ঘুরে দেখেছি। অনেক বাড়িঘর ভেঙে গেছে। দুর্ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি। তবে তালিকা করে যতটুকু সম্ভব সহযোগিতা করা হবে।

এদিকে, টানা কয়েকদিন ধরে দাবদাহের প্রভাবে হাঁপিয়ে ওঠা রংপুর নগরীতে ফিরেছে প্রশান্তি। সামান্য বৃষ্টিতে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছেন নগরবাসী। যেন শান্তি ফিরেছে সাধারণ মানুষের মনে। বৈশাখের এই ঝড়বৃষ্টি চলতি মৌসুমে এই প্রথম।

রংপুর নগরীর ২১ নম্বর ওয়ার্ডের শাপলা চত্বর এলাকার নাজমুল হাসান বলেন, গত কয়েকদিন অনেক গরম ছিল এলাকায়। আজ হঠাৎ কালবৈশাখী ঝড় হলো, কিন্তু স্থায়িত্ব খুব কম ছিল। তারপরও বৃষ্টি হওয়ায় শান্তি লাগছে।

একই ওয়ার্ডের বাসিন্দা হাজীপাড়া চামড়াপট্টি এলাকার ফাহিম মুরশেদ বলেন, কালবৈশাখী ঝড়ে শহরের অনেক জায়গায় গাছপালা উপড়ে পড়েছে। কোথাও কোথাও ঘরের টিনের চাল উড়ে গেছে। পুরো শহর লোডশেডিংয়ের কবলে পড়েছে।

রংপুর আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ মোস্তাফিজুর রহমান জানিয়েছেন, এই সময়ে বৃষ্টিপাত হয়েছে ২০ মিলিমিটার। বাতাসের গতিবেগ ছিল ৮ নটিক্যাল মাইল। বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। রিপোর্ট লেখার সময় পর্যন্ত কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে সেই তথ্য পাওয়া যায়নি।

তবে রংপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল জানিয়েছেন, কালবৈশাখীর ঝড়ে কোথাও কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে কিনা সেগুলো খতিয়ে দেখতে স্থানীয় বাসিন্দাদের পাশাপাশি সরকারি কর্মকর্তারা কাজ শুরু করেছেন। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ পরে বলা যাবে।

এদিকে দেশের ১৬ জেলার ওপর দিয়ে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর। এসব অঞ্চলের তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি।

শনিবার (২৬ এপ্রিল) রাতে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. তরিফুল নেওয়াজ কবিররের দেওয়া পূর্বাভাসে এ তথ্য জানানো হয়।

আবহাওয়া অফিস জানায়, আগামী ২৪ ঘণ্টায় ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বিদ্যুৎ চমকানো/বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেইসঙ্গে রাজশাহী বিভাগসহ টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, মৌলভীবাজার, খুলনা, যশোর ও চুয়াডাঙ্গা জেলার উপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপ প্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। এ ছাড়া সারা দেশে দিন এবং রাতের তাপামাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *